শিক্ষা ক্যাডারদের তিন দিনের কর্মবিরতিতে স্থবির শিক্ষাঙ্গন

Slider শিক্ষা


বন্ধ রয়েছে পাঠদান। পরীক্ষাও স্থগিত। কাজ হয়নি কোনো দফতরেও। গতকাল মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী সরকারি কলেজ ও প্রতিষ্ঠানে আবারো শুরু হয়েছে টানা তিন দিনের কর্মবিরতি। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ নানান দাবিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে সারা দেশের সরকারি কলেজে শুরু হয়েছে সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি। গতকাল প্রথম দিনে কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, সভায় অংশগ্রহণ ও দাফতরিক কাজ থেকে বিরত ছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ফলে দেশের সরকারি কলেজগুলোতে তৈরি হয়েছে একধরনের অচলাবস্থা।

এ দিকে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারের নানাবিধ সমস্যা ও যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের জন্য বারবার কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি প্রদান এবং ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তা নিয়োগবিধি বাতিল, শিক্ষা ক্যাডার তফসিলভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভূতদের প্রত্যাহার, জেলা-উপজেলায় শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রশাসন সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় পদসৃজন, চাকরির পাঁচ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড প্রদান করতে হবে। এসব দাবি আদায় না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

এর আগে সরকারি কলেজ শিক্ষকদের টানা তিন দিনের কর্মবিরতির কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২১ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স তৃতীয় বর্ষের আগামী ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবরের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। স্থগতি এই পরীক্ষা যথাক্রমে আগামী ১৫, ১৯ ও ২১ নভেম্বর একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। যদিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করেছে অনিবার্য কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। অন্য দিকে ২০২০ সালের প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স পরীক্ষার ১১ অক্টোবর তারিখের গণিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এই পরীক্ষাটি আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দফতরের পরিচালক মো: আতাউর রহমান।

শিক্ষা ক্যাডার সূত্র জানায়, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকা দেশের সব সরকারি কলেজ, সরকারি আলিয়া মাদরাসা, সরকারি টিটি কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর, সব শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবি, নায়েম, ব্যানবেইসসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সব দফতর ও অধিদফতরে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা সর্বাত্মক কর্মবরতি পালন করছেন। ক্লাস-পরীক্ষা, শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধীন ভর্তি, ফরম পূরণ, সবধরনের পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং দাফতরিক সব কর্মকাণ্ড, কর্মবিরতির আওতায় রয়েছে।

গতকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, কোনো কাজকর্মই হচ্ছে না। সকালের দিকে সরেজমিন রাজধানীর ঢাকা কলেজ ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকলেও গতকাল একেবারেই ফাঁকা। বিভাগগুলোতেও নেই তেমন কোনো কার্যক্রম। শিক্ষকরা উপস্থিত হলেও কোনো ধরনের দাফতরিক কার্যক্রম কিংবা পাঠদানে অংশগ্রহণ করেননি। ঢাকা কলেজ ছাড়াও ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজ, বাঙলা কলেজ, তেজগাঁও কলেজসহ সারা দেশের সবগুলো কলেজে একযোগে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।

বিসিএস শিক্ষা সমিতি ঢাকা কলেজ ইউনিটের সম্পাদক ড. মো: দিললুর রহমান জানান, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি আমরা পালন করছি। শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য অবিলম্বে দূর করতে হবে। আমরা চাই সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী সব ক্যাডার কর্মকর্তার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হোক। আমরা কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, সভায় অংশগ্রহণ ও দাফতরিক কাজ হতে বিরত আছি। অপর দিকে পরিকল্পিতভাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মাধ্যমে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার বিলুপ্ত করার অপচেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মো: শাহেদুল খবির চৌধুরী।

প্রফেসর শাহেদুল খবির বলেন, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা সরকারবিরোধী আমলারা এ ক্ষেত্রে মূল নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছেন। শিক্ষা ক্যাডারের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে বা বিপন্ন করার জন্য অনেকেই উদ্যোগ নিয়েছেন। সংবিধানে স্পষ্ট বলা রয়েছে যে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী সমানভাবে সুযোগ-সুবিধাগুলো প্রাপ্য হবেন। প্রত্যেকটি ক্যাডারের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণের কথা বলা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাস্তব ক্ষেত্রে আমরা এডুকেশন ক্যাডারে একটি ভিন্ন চিত্র দেখছি। অন্য অনেক ক্যাডারের সাথেও দীর্ঘ দিন ধরে এ বৈষম্য চলমান রয়েছে। এই বৈষম্যগুলো নিরসনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমরা দেখেছি যে, এই নির্দেশনা অমান্য করে বৈষম্য দূর করার বদলে দিন দিন বৈষম্য বাড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *