ভুল করেই যাচ্ছেন এমপিরা

Slider জাতীয়

perliament_BG_559337703

ঢাকা: জাতীয় সংসদে সদস্য নির্বাচিত হওয়া প্রত্যেকের কার্যপ্রাণালীবিধি পড়া বাধ্যতমালূক হলেও এতে মোটেই আগ্রহ নেই এমপিদের। তাই সংবিধান ও কার্যপ্রাণলীবিধি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণার অভাবে হরহামেশা ভুল করছেন তারা।

যদিও প্রতিটি সংসদ গঠনের পর বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থার টাকায় নতুন এমপিদের জন্য ওরিয়েন্টেশন কোর্স আয়োজন করা হয়। এতে এমপিদের সংবিধান, কার্যপ্রণালীবিধি এবং অধিবেশনে পালনীয় বিভিন্ন বিধি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।

কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ গঠনের পর অনিয়মের অভিযোগ তুলে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। নতুন কোন প্রকল্পে অর্থায়নে অনাগ্রহের কথা জানিয়ে দেয় সংসদ সচিবালয়কে।

তবে ২০১৪ সালের ৩ জুন ইমপ্রুভিং ডেমোক্রেসি থ্রু পার্লামেন্টারি ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে মেয়াদ বাড়ায়নি ইউএনডিপি। ফলে দশম জাতীয় সংসদের নতুন এমপিদের প্রশিক্ষণে ভাটা পড়েছে।

সংবিধান ও কার্যপ্রণালীবিধি না পড়ায় এমপিরা একের পর এক ভুল করে যাচ্ছেন বলে মনে করেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়াও।

তিনি বলেন, প্রত্যেক সংসদ সদস্যের আসনে একটি করে কার্যপ্রণালীবিধি ও সংবিধানের কপি দেওয়া আছে। কিন্তু দু:খের বিষয়, কেউ বই দুটি ধরেও দেখেন না। ফলে কোনটা পয়েন্ট অব অর্ডার, কোনটা দৃষ্টি আকর্ষণীয় নোটিশ, কোনটা ৭১’ বিধি অনেক জানেনই না। প্রথম দিন থেকেই প্রত্যেককে অন্তত কার্যপ্রাণালী বিধিটা পড়ে আসতে বলা হলেও কাজে আসছে না। যে কারণে ভুল করেই যাচ্ছেন এমপিরা।

উদাহরণ হিসেবে ডেপুটি স্পিকার বলেন, আমাদের এখানে এখন প্রতিনিয়তই পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন এমপিরা। কিন্তু তাদের ধারণাই নেই আসলে কোন বিষয়ে পয়েন্ট অব অর্ডার হয়। কার্যপ্রণালীবিধি অনুযায়ী, সংসদে যদি কোন বিধি বর্হিভূত আলোচনা হয় তাহলে যে বা যিনি বিষয়টি বুঝতে পারবেন তিনিই স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিষয়টির অবতারণা করবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এমপিরা পয়েন্ট অব অর্ডারের সুযোগ নিয়ে নিজেদের এলাকায় সমস্যার কথা বলছেন। এটা আসলে পয়েন্ট অব অর্ডার না।

এমপিদের প্রশিক্ষণে ইউএনডিপির ফান্ডিং বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, বিদেশি সংস্থা অর্থায়ন বন্ধ করলেও আমাদের ওরিয়েন্টেশন বন্ধ হয়নি। দশম সংসদে এ পর্যন্ত ৩-৪টি প্রোগ্রাম হয়েছে। তবে আগের চেয়ে কিছুটা কম হচ্ছে।

তিনি বলেন, এমপিদের শেখার আগ্রহ থাকলে নিজেরাই কার্যপ্রণালীবিধি পড়তেন। আর পড়লে সমস্যা হতো না। আসলে আমাদের এমপিদের পড়ার আগ্রহই কম।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, আমরা যারা পুরনো তাদের ভুল কম হয়। কিন্তু নতুনদের মধ্যে কার্যপ্রণালীবিধি পড়ার প্রবণতা খুব কম। কার্যপ্রণালীবিধি ও সংবিধান সম্পর্কে কেউ পড়েন না বলেই ভুল করেন।

যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি এ পর্যন্ত একটি ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছি। আর সুযোগ হয়নি। তবে আমি নিজ আগ্রহে পার্লামেন্টারি বিধি বিধান পড়ার চেষ্টা করি। বিশেষ করে কোন একটি বক্তব্য দেওয়ার আগে সিনিয়র সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করি। আমি এখনো শেখার চেষ্টা করছি।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, নবম জাতীয় সংসদের শুরু থেকে দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়নে এমপিদের জন্য ১০ থেকে ১৫টি ওরিয়েন্টেশন কোর্স পরিচালিত হয়। সংসদের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থসহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ইউএনডিপি, ইউএসডিপি, ইউএনএফপিএ, ইউএসএইড, এশিয়া ফাউন্ডেশন, ইউকেএইড ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *