পূর্বাচল প্রকল্পে ‘দুর্নীতিবাজ’ ধরতে মাঠে দুদক

Slider জাতীয়


পূর্বাচল প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন, প্লট বরাদ্দ, পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন, মাটি ভরাট এবং রাস্তা ও ড্রেন প্রশস্তকরণসহ বিভিন্ন কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

পূর্বাচল প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে সাবেক প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিকসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান রাজউকের শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়াও পূর্বাচল প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম কাজ করছে। দুদকের তিন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, প্রবীর কুমার দাস এবং মো. সহিদুর রহমানের সমন্বয়ে এ অনুসন্ধান চলছে।

সম্প্রতি অনুসন্ধান কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া পূর্বাচল প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে রাজউকের চেয়ারম্যানকে পাঠানো নোটিশে আট ধরনের নথিপত্র তলব করেছেন। এগুলো মধ্যে রয়েছে পূর্বাচল প্রকল্পের ইছাপুর মৌজা এবং কামতা-হাড়ারবাড়ি-রঘুরামপুর মৌজার মাটি ভরাট সংক্রান্ত নথি ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। এসব কপি অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে সরবরাহ করতে চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া উজ্জ্বল মল্লিক পূর্বাচল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকাকালে প্রকল্পের লেক, মাটি ভরাট, রাস্তা নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ সংক্রান্ত নথিপত্র এবং প্রকল্পের ৫ নম্বর সেক্টরের লেক ভরাট সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পের পানি সরবরাহের জন্য বরাদ্দ ও ব্যয় সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র; প্রকল্পের লে-আউট কতবার সংশোধন করা হয়েছে, সে সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রসহ বিস্তারিত

তথ্য; রাজউকের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিকের নামে পূর্বাচল প্রকল্পে কতটি প্লট বরাদ্দ হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত নথিপত্র; রাজউক থেকে প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত দেড় হাজার জনের মধ্যে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথি ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে চিঠিতে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে (ডিপিএম) মালামাল কেনার সব ওয়ার্ক অর্ডার, বিল পরিশোধ সংক্রান্ত বিল ভাউচার এবং এ বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়েছে কিনা, সে সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র এবং যদি তদন্ত প্রতিবেদন থাকে তা সরবরাহের পাশাপাশি পূর্বাচল প্রকল্পে শিকদার গ্রুপের অনুকূলে বরাদ্দকৃত প্লট সংক্রান্ত নথি ও রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ‘রাজউক থেকে অভিযোগ সংক্রান্ত কিছু নথিপত্র পাওয়া গেছে। আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্রের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। তারা যদি সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সরবরাহ করেন, তাহলে এ অনুসন্ধানটি স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে।’

অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদক কশিনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘এ বিষয়ে অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়েছে। পত্রালাপ চলছে। সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সংগ্রহের কাজ চলছে। এখন পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে। পর্যালোচনা শেষ হলে আমরা একটি প্রতিবেদন পাব। সেই প্রতিবেদনে অবশ্যই পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার সুপারিশ থাকবে। এরপর নিয়মিত চ্যানেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কমিশন থেকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঢাকার তুরাগ, শীতালক্ষ্যা ও বালু নদীর পাশে ৬ হাজার ২২৭ একর জমির ওপর ১৯৯৫ সালে শুরু হয় পূর্বাচল প্রকল্পের কাজ। এখানে ৩০টি সেক্টরে হচ্ছে ২৬ হাজার ২১৩টি আবাসিক প্লট। এক হাজার ৩৩টি বাণিজ্যিক, ৪৬৭টি প্রশাসনিক, ২৪৮টি প্রাতিষ্ঠানিক ও ৬৩টি ডিপ্লোম্যাটিক প্লট। শুরুতে ৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ধরে কাজ শুরু হলেও সর্বশেষ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা।

গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১০ সালে। পরে সময় বাড়িয়ে প্রথমে ২০১৫ সাল, এরপর আরও কয়েক ধাপে তা গিয়ে দাঁড়ায় ২০২০ সাল ও পরের পর্যায়ে ২০২১ সালের জুন, তাতেও কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এবার সর্বশেষ সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর।

এদিকে পূর্বাচল প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধানের পাশাপাশি এ প্রকল্পের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব থেকে যারা অবৈধভাবে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আলাদা অনুসন্ধান করছে দুদকের একই অনুসন্ধান টিম। শিগগিরই দুদক থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে পৃথকভাবে নোটিশ জারি করা হবে বলে দুদক থেকে জানা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *