‘আগে বিরোধী দল হরতাল দিত, এখন সরকারি দল হরতাল দেয়’

Slider রাজনীতি


আগামীকাল রংপুরে হতে যাচ্ছে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। কালেক্টর ঈদগাহ মাঠে এ গণসমাবেশ করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিএনপির নেতা কর্মীরা। সমাবেশে মানুষের ঢল ঠেকাতে আজ শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে মোটর মালিক সমিতির ডাকা ৩৬ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট।

ধর্মঘটে আন্তজেলা পরিবহনসহ ঢাকাগামী সকল যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার সকালে রংপুর নগরীর কামারপাড়াস্থ ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে বাসের টিকেট কাউন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে। বাসস্ট্যান্ডে ঢাকাগামী বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বাস কাউন্টারের এক কর্মচারী জানান বিএনপির সমাবেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে এ আশঙ্কায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হয়েছেন তারা গাড়ি না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। ঢাকা যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে এসে গাড়ি না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শামিম মিয়া নামে এক যাত্রী জানান, হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটের ফলে আমরা চরম দুর্ভোগে পড়েছি। এখন ঢাকা যাব কীভাবে সে চিন্তাই আছি। আগে দেখতাম বিরোধীদল হরতাল দিত আর এখন সরকারি দল হরতাল দিচ্ছে। শামিম মিয়ার মতো এমন অনেককেই গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

এদিকে ধর্মঘটের ফলে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে নেতা-কর্মীরা রংপুরে আসছেন। পথে পথে পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের।

সকল বাধা উপেক্ষা করে বিভাগের আট জেলার নেতা কর্মীরা মোটরসাইকেল, কার, পিকআপ ও বাসযোগে রংপুরে আসছেন।

সমাবেশস্থল কালেক্টর মাঠে শত শত নেতা-কর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এরইমধ্যে তারা মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নিয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও থেকে আসা সরকার মো. নুরুজ্জামান নুর জানান, তার জেলা থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তত ২০ হাজার নেতা-কর্মী গণসমাবেশ সফল করতে রংপুরে আসবেন। ইতোমধ্যে ৫ হাজার নেতা-কর্মী রংপুরে এসেছেন। বাকিরা বিভিন্ন উপায়ে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছবেন।

তিনি আরও বলেন, পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণার পর ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলা থেকে মাইক্রোবাস, পিকআপ ও মোটরসাইকেলে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে নেতা-কর্মীরা ক্রমান্বয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। যারা রাতের মধ্যে এসে পৌঁছেছে, তাদের কেউ বাজারে, অলিগলি ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িসহ অনেকেই আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করছেন। অনেকে আবার সমাবেশস্থলেই রাত্রিযাপন করছেন।

স্বেচ্ছাসেবক দলের এই নেতা আরও বলেন, রাস্তায় আসার পথে দিনাজপুরের দশমাইল, সৈয়দপুরের বাস টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। গণসমাবেশের উদ্দেশে রংপুরের দিকে আসা নেতা-কর্মীদের বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে গণসমাবেশ সফল করতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক ও সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে থাকতে দেখা গেছে।

তারা সমাবেশের মঞ্চ নির্মাণসহ অন্যান্য প্রস্তুতি এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবর নেন। সভামঞ্চ প্রস্তুত প্রায় ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব বলেন, আমাদের আন্দোলন সমাবেশ ঠেকাতে এমন কোনো পদক্ষেপ নেই যা সরকার গ্রহণ করেনি। তবে সমাবেশ ঠেকাতে পারবে না। মানুষ একটা গোমট আবহাওয়ার মধ্যে আছে। এ আবহাওয়াকে ভেঙে ফেলার জন্য মানুষ আজ বিএনপির যে কোন সমাবেশে দলে দলে যোগ দিচ্ছে। রংপুরের সমাবেশেও লোকজন যোগ দেবে। ধর্মঘটের নামে গণপরিবহন বন্ধ করে গণসমাবেশে লোকজনের আসা ঠেকাতে পারবে না সরকার।

বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, হোটেলে অবস্থান নেওয়া লোকজনের খোঁজ নেওয়ার বিষয়টি পুলিশের নিয়মিত কাজ। এটি আমরা সংগ্রহ করি এবং হোটেল মালিকগণ আমাদের জানান। আমরা কাউকে হয়রানি করছি না। অভিযোগ করতেই পারে, আমরা তো কাউকে ধরে নিয়ে আসিনি।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কমিশনার নুরে আলম মিনা বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছি। সমাবেশ ঘিরে যাতে কোন ধরনের সহিংসতা না ঘটে, সেজন্য কয়েকদফায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *