অমিত হাবিবের প্রথম জানাজা সম্পন্ন

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার সম্পাদক, প্রখ্যাত সাংবাদিক অমিত হাবিবের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে রাজধানীর বাংলামোটরে দেশ রূপান্তর কার্যালয় প্রাঙ্গনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল, কো-চেয়ারম্যান ও দেশ রূপান্তরের প্রকাশক মাহির আলী খাঁন রাতুল, তার প্রিয় প্রতিষ্ঠান দেশ রূপান্তরের সহকর্মী, শুভাকাঙ্খীসহ অন্যান্যরাও জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।

জানাজা শেষে রূপায়ন গ্রুপ ও তার সহকর্মীদের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

অমিত হাবিবের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় প্রেসক্লাবে বেলা সাড়ে ১১টায়। সেখান থেকে দাফনের জন্য মরদেহ নেওয়া হবে তার জন্মস্থান ঝিনাইদহে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অমিত হাবিবের মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।

অমিত হাবিবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাতে এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল, কো-চেয়ারম্যান ও দেশ রূপান্তরের প্রকাশক মাহির আলী খাঁন রাতুলসহ রূপায়ণ গ্রুপের পরিচালক এবং কর্মকর্তারা অমিত হাবিবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদত মাহবুবউল আলম হানিফ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদও অমিত হাবিবের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ (ক্র্যাব) বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা অমিত হাবিবের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

অমিত হাবিবের জীবন ও কর্ম : অমিত হাবিব ১৯৬৩ সালের ২৩ অক্টোবর ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাজিরবেড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম খন্দকার ওয়াহেদুল হক। গত বছরের ৩ নভেম্বরে মারা যান অমিত হাবিবের মা শামসুন নাহার বকুল। এর আগে প্রয়াত হন তার বাবাও, যিনি মহেশপুর উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ওয়াহেদুল হকের তিন সন্তানের মধ্যে অমিত হাবিব ছিলেন সবার বড়। তার অপর দুই ভাই ফয়জুল হাবিব ও মেহেদি হাসান।

যশোর এমএম কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন অমিত হাবিব। তখন থেকে লেখালেখিতে যুক্ত হন তিনি। সে সময় বিচিন্তা, পূর্বাভাস, প্রিয় প্রজন্ম পত্রিকায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত নাটক, অনুষ্ঠানের সমালোচনা, রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখা লিখে বেশ জনপ্রিয়তা পান। তিনি লিটলম্যাগে লেখালেখি করতেন। সে সময় তার বেশ কিছু লেখা কবিতাও ছাপা হয়।

অমিত হাবিবের সংবাদিকতা শুরু হয়েছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৬ সালে। মাসিক উন্মেষ, সাপ্তাহিক পূর্বাভাস, আজকের কাগজ হয়ে ভোরের কাগজে যোগ দেন ১৯৯২ সালে।

একসময়ের পাঠকনন্দিত ভোরের কাগজে ১৯৯৮ সালে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর ২০০৩ সালে যোগ দেন দৈনিক যায়যায়দিনে। তারপর ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের পেইচিংয়ে যান, সেখানে তিনি চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনালে (সিআরআই) যোগ দেন। সিআরআইতে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজ করেছেন। এরপরই তিনি দেশে ফিরে যোগ দেন সমকালে, এখানে তিনি প্রধান বার্তা সম্পাদকের পদে কাজ করেছেন।

এরপর ২০০৯ সালের নভেম্বরে অমিত হাবিব কালের কণ্ঠে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৩ সালে তিনি সেখানে উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১৭ সালে সম্পাদক হিসেবে তিনি দেশ রূপান্তরে যোগ দেন। ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর তার নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে দেশ রূপান্তর। অল্প সময়ের মধ্যে পত্রিকাটি পাঠকের মধ্যে সাড়া ফেলে।

নির্মোহ, বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা ছিল অমিত হাবিবের মূল্য লক্ষ্য। প্রিন্ট মিডিয়া যখন মরতে বসেছে, ডিজিটাল ও অনলাইন সাংবাদিকতার প্রতিযোগিতায় প্রতিদিনই কমছে দৈনিক পত্রিকার ছাপার সংখ্যা। অমিত হাবিব তাঁর সহকর্মীদের বলতেন, একমাত্র সুসাংবাদিকতা, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাই পারে দৈনিক পত্রিকাকে বাঁচিয়ে রাখতে।

গত ২১ জুলাই দেশ রূপান্তর অফিসে অসুস্থ হয়ে পড়লে অমিত হাবিবকে প্রথমে স্কয়ার হাসপাতালে, পরে বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন খানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিআরবি হাসপাতাল থেকে তাকে ২৫ জুলাই রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অমিত হাবিবের হেমোরেজিক স্ট্রোক হয়েছিল। তাঁর রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। এতে আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে তার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *