আজ মহাসপ্তমী প্রাণ সঞ্চার করা হবে মৃন্ময়ীতে

Slider সারাদেশ


ষষ্ঠী তিথিতে বোধন পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। আজ মহাসপ্তমী। ভোরে হয়েছে ‘কলাবউ’ স্নান। দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশের মধ্যদিয়ে শুরু হলো সপ্তমী পুজো। নবপত্রিকাকে দেবীর ডানদিকে সিদ্ধিদাতা গণেশের পাশে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। নবপত্রিকার আক্ষরিক অর্থ ৯টি পাতা। রম্ভা (কলাগাছ), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (ডালিম), অশোক, মান ও ধান এই ৯টি উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি করা হয় এই নবপত্রিকা। মূলত এই ৯টি উদ্ভিদ দেবী দুর্গার ৯টি শক্তির প্রতীক।

নবপত্রিকার পুজো প্রকৃতপক্ষে শস্যদেবীর পুজো। এই শস্যবধূকেই দেবীর প্রতীক রূপে গ্রহণ করে প্রথমে পুজো করতে হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। এই দিনই চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয় দেবীর মৃন্ময়ীতে। মা’র সপরিবারে তিথিবিহীত পূজা শেষে অনুষ্ঠিত হবে সপ্তমীবিহীত পূজা। শাস্ত্রমতে মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে (১৬ উপাদানে) দুর্গা দেবীর পূজা করা হয়। একই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য ও চন্দন দিয়ে পূজা করা হবে। পূজা শেষে দেবী দুর্গার চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন ভক্তরা। ঢাকের তালে, মন্ত্র ও চণ্ডীপাঠ, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনিতে মন্দিরে মন্দিরে উৎসবে মাতবে পুরো সনাতনী গোষ্ঠী। আগামীকাল অষ্টমী তিথিতে নির্জলা উপবাস থেকে মন্দিরে মন্দিরে সনাতনী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সকলে মিলে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হবে। এই দিনই হবে সন্ধীপূজা। মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হবে ‘কুমারী পূজা’। শাস্ত্রমতে, এদিন পূজিত কুমারী কন্যার নামকরণ করা হয় ‘উমা’। ভক্তদের মতে, এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। মূলত নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। ১৪ই অক্টোবর নবমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর মহা প্রসাদ বিতরণ করা হবে। ১৫ই অক্টোবর দশমীতে তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দোলায় চড়ে আবারো ফিরবেন কৌলাশে।

সরজমিন রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই দেবী দর্শনে ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। সারি সারি বাঁশ বেঁধে নির্ধারণ করা হয়েছে নারী-পুরুষের পৃথক প্রবেশ দ্বার। চলমান করোনা পরিস্থিতির দিকেও রাখা হয়েছে বিশেষ নজর। পুরো মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ-আনসারসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মন্দিরে আগত সাথী সাহা বলেন, আমরা পুরো একটা বছর অপেক্ষায় থাকি এই দিনগুলোর জন্য। একে অপরের আনন্দ ভাগাভাগি করার মধ্যদিয়ে পূজার দিনগুলো কখন কেটে যায় টেরই পাই না। সব থেকে বেশি মজা হয় অষ্টমীর দিন সকালে অঞ্জলি দেয়া ও দশমীতে সিঁদুর খেলা। আর পূজাকে ঘিরে নিজের ও আপনজনদের জন্য নতুন পোশাক কেনা-কাটাও কম আনন্দের না।

রাজধানীর খামারবাড়ী কৃষি ইনস্টিটিউটের দুর্গাপূজা মণ্ডপেও একই চিত্র। রঙ-বেরঙের বাহারি সব পোশাক পরে ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষরা। শিশির বিশ্বাস নামে এক দর্শনার্থী বলেন, বছর ঘুরে মায়ের আসার খুশিটা বাধন ছেড়া। নতুন কাপড়, হরেক রকম খাবার, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখা, অঞ্জলি দেয়া সব মিলে পূজোর কয়টা দিন আনন্দ উৎসবে ঘেরা। কিন্তু দশমীতে ভাসনের মধ্য দিয়ে মায়ের চলে যাওয়াটা বেদনাদায়ক। মায়ের আগমনের জন্য আবারো একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে। এদিকে রামকৃষ্ণ মিশন, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, শাঁখারী বাজার, রমনা কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপ, পশ্চিম ধানমণ্ডির দুর্গা মন্দির, আখড়া মন্দির, নিমতলা মন্দির, ফার্মগেট, বনশ্রীসহ রাজধানীর অন্য এলাকাতেও জমকালোভাবে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপূজার। অলিগলি, রাজপথ সাজানো হয়েছে আলোক সজ্জায়। কাপড়-বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রবেশদ্বার। মন্দিরে মন্দিরে শোভা পাচ্ছে মায়ের প্রতিমা। রঙ তুলির আঁচড়, প্রতীকী অস্ত্র, গহনা, শাড়িতে সজ্জিত করা হয়েছে উমা ও তার সন্তানদের। পুজোর আয়োজকরা বলছেন, মহালয়ের পর থেকেই দর্শনার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়। কিন্তু সপ্তমীতিথিতে মূল পূজা শুরুর পর এই ভিড় বাড়ে কয়েকগুণ।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের তথ্যমতে, এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা। গত বছরের চেয়ে এবার মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৯০৫টি। ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা হবে ২৩৮টি স্থানে, যা গত বছরের চেয়ে ৪টি বেশি। নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা পালনে সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দুর্গোৎসবের নিরাপত্তায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার সদস্য ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের পাশাপাশি পূজা আয়োজকদের স্বেচ্ছাসেবকরাও দায়িত্ব পালন করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *