মা হারানো শিশু জায়েদ পাচ্ছে নতুন ঠিকানা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যু হলেও বেঁচে যায় দেড় বছরের শিশু জায়েদ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসায় এখন সে সুস্থ। উচ্চ আদালত শিশুটিকে তার মামার জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দিলেও সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জায়েদকে নিজের কাছে না রাখার কথা জানিয়েছেন মামা রবিন মিয়া। এ অবস্থায় শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভা শেষে রোববার (১৯ মে) নতুন ঠিকানায় যাবে শিশু জায়েদ, এমনটি জানিয়েছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা।

শিশুটি মামা রবিন মিয়া বলেন, আমি পেশায় পিকআপভ্যান চালক। নিজের তিন সন্তান নিয়েই কষ্টে দিন চলে। সেখানে জায়েদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব নয়। হয়তো গ্রামে থেকে রিকশাচালক হবে, ঠিকমতো খাবার পাবে না। আমি চাই আমার ভাগ্নের সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ। সে যখন বড় হবে তখন সে বিষয়টি বুঝতে পারবে। তিনি আরও বলেন, আমার বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই আমার সিদ্ধান্তের ওপর বিষয়টি ছেড়েছে। শিশু কল্যাণ বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নেয় তাতেই জায়েদের ভালো হবে।

এদিকে ময়মনসিংহ শিশু কল্যাণ বোর্ড সভা করে শিশুটির পরিবারের সঠিকতা যাচাইয়ে সরেজমিন যাচাই-বাছাই করে। জায়েদা ও তার পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জেলা সমাজসেবা বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, শিশুটির মামা চান ভাগ্নের সুন্দর ভবিষ্যৎ। সে কারণে শিশু কল্যাণ বোর্ডের ওপর আস্থা রেখে তারা একটি আবেদন দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে রোববার সভা করে নতুন ঠিকানায় দেওয়া হবে জায়েদকে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুটিকে নিতে আবেদনও করেছেন।

শিশুটি এখনও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। সেখানে সমাজসেবা বিভাগের কর্মী ও আনসারদের তত্ত্বাবধানে থাকছে সে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, শিশুটি চিকিৎসায় এখন পুরোপুরি সুস্থ। সে এখন আর কান্নাকাটি করে না, স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভা শেষে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হবে।

গত ৯ মে মধ্যরাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন এক নারী ও দেড় বছরের শিশু। আহত অবস্থায় তাদের প্রথমে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১০ মে রাতে মারা যাম ওই নারী। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ১১ মে রাতে তাদের পরিচয় শনাক্ত হয়। সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার কুসিউড়া গ্রামের রমিজ উদ্দিনের মেয়ে জায়েদা আক্তার ভালুকায় বসবাস করে একটি জুতার কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। তার দেড় বছরের শিশু মেহেদি হাসান জায়েদ। তবে শিশুটির বাবার পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে মরদেহ শনাক্ত করে ভাই রবিন মিয়া। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল জায়েদা। ২০১৭ সালের দিকে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আবার বিয়ে হয় জায়েদার। গত ১২ মে ময়মনসিংহ মেডিকেলে জায়েদার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু শিশুটির পরিবারের পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত না হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে হস্তান্তর করেনি।

ঘটনার তিন দিনের মাথায় ১২ মে ভালুকা থানায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করে হাইওয়ে পুলিশ। এদিকে গত ১৩ এপ্রিল জায়েদকে তার মামার জিম্মায় দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ভালুকা মডেল থানায় দায়ের করা মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করে দায়ী গাড়ি এবং আসামিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি আগামী ২০ মের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন, সুরতহাল প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিচারপতি এম আর হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদের চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

তবে হাইকোর্টের দারস্থ হননি জায়েদের মামা রবিন মিয়া। তিনি আরও বলেন, আমি হাইকোর্টে কোনো আবেদন করিনি, কারা করেছে তাও জানি না। কোর্ট থেকে আমাকে ডাকার পর আমার সার্বিক পরিস্থিতি বলে এসেছি।

ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখেছি, একটি গাড়ি চাপা দিয়েছে সেটি বুঝা যায়। কিন্তু গাড়িটির নম্বর নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *