আতঙ্কে মানুষ, কক্সবাজার থেকে ৬২৫ কি.মি. দূরে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এগিয়ে আসছে উপকূলে

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

ঢাকা: অবহাওয়া অধিদফতর বলছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি একই এলাকায় নিম্নচাপের পরিণত হয়েছে।

রোববার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৬২৫ কি.মি. দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭১০ কি.মি. দক্ষিণে ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৫৫ কি.মি. দক্ষিণে এটি অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘণীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপ ও পরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে পরিণত হয়ে উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি-৩-এ কথা বলা হয়েছে।

আবহওয়া অধিদফতর থেকে আরো বলা হয়েছে, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের বর্তমানে একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হওয়া আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে। একইসাথে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

এর আগে আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সমুদ্রে অবস্থানর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে রূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

বুধবার বাংলাদেশ উপকূলে ইয়াস আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইয়াসের ক্ষতিরোধে এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদদের ধারণা, সাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় হিসেবে রূপ নেবে সুপার সাইক্লোনে। বুধবার সকালে উপকূলে এটি আঘাত হানলে তখন বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। এতে উপকূলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তৈরি হতে পারে জলোচ্ছ্বাসও। তাই সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ব্যাপারে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে উপকূলীয় জেলা খুলনা। ইতিমধ্যে জেলার ৯টি উপজেলায় ১ হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সকে।

খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ কোনো ঘূর্ণিঝড় ৪ নম্বর সংকেত না হওয়া পর্যন্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয় না। কিন্তু ‘ইয়াস’ বিধ্বংসী হতে পারে বিবেচনায় নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সিডর, আইলা, আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকার মানুষ। প্রায় আট মাস পর সাগরের নোনা পানিমুক্ত হয় কয়রা উপজেলা। আম্পানের ক্ষত এখনো শুকায়নি। এখনো সংস্কার হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধও। মাঝেমধ্যে নদীতে সামান্য জোয়ারের পানি বাড়লেই অনেক এলাকার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে নতুন করে আবার ঘূর্ণিঝড় আসছে শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। তাঁরা বলছেন, আম্পানের পর কেবল কিছুটা গুছিয়ে উঠছিলেন। এরই মধ্যে আবার বড় কোনো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে তাঁদের একেবারে নিঃস্ব করে দেবে।

গত বছরের ২০ মে আঘাত হানা আম্পানে কয়রা উপজেলার বেড়িবাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হয়। জেলার ৯টি উপজেলায় সাড়ে ৮৩ হাজারের মতো ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে শুধু কয়রা উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার। সুন্দরবনসংলগ্ন ওই উপজেলার ১৫৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ঝুঁকিপূর্ণ।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, বাঁধের যেসব জায়গায় আম্পানে ভেঙে গিয়েছিল, সেসব বাঁধের সংস্কারকাজ এখনো শেষ হয়নি। এখন যদি আম্পানের অর্ধেকের সমান জোয়ারের পানি ওঠে, তাহলে আম্পানের চেয়ে বড় কোনো দুর্যোগে পড়বে মানুষ। অনেকেই নিজেদের গুছিয়ে নিতে কাজ করছিলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কথা শুনে এখন সবাই কাজ বন্ধ রেখেছেন।

খুলনা আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, রোববার দুপুর ১২টায় ‘ইয়াস’ নিম্নচাপে পরিণত হয়ে মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ২৬ মে নাগাদ ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। যখন লোকালয়ে আঘাত হানবে, তখন জোয়ারের সময় হলে পানির উচ্চতা ৪ থেকে ৫ ফুট বাড়তে পারে। এখন ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতাসংকেত দেওয়া হয়েছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, এখন ১ নম্বর সতর্কতাসংকেত চলছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষ সাধারণত ৭ নম্বর সংকেত না পাওয়া পর্যন্ত ঘর থেকে বের হতে চান না। কিন্তু এরপরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ধুয়েমুছে প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, চিকিৎসক ও অন্যান্য কার্যক্রম গুছিয়ে রাখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *