ফেসবুক যেন বিচ্ছেদের সাক্ষী

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

তারকাদের বিয়ের খবরে ভক্তরা এখন যেমন খুব বেশি আনন্দিত হয় না, ঠিক তেমনি মন খারাপ করেন না বিচ্ছেদ হলে। কারণ সম্পর্ক ভাঙা-গড়ার খেলায় নিত্যই ডুবে থাকে শোবিজ। আজ এই তারকার বিয়ে তো কাল ওই তারকার বিচ্ছেদ। আর এসব নিয়ে ‘নাটক’ তো চলেই। আর এসব বিচ্ছেদের সাক্ষী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। কারণ এখানে স্টাট্যাস দিয়েই নিজেদের বিচ্ছেদের কথা জানান দেন তারকারা। অনেকে আবার এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ‘নাটক’ও করেন। বিচ্ছেদ নিয়ে সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি ‘নাটক’ করেছেন সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।

২০১৬ সালে পারভেজ মাহমুদ অপু নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন মাহিয়া মাহি। এর পর থেকে তার সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে একাধিকবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। সংসার জীবেন একটু ঝামেলা হলেই মাহি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি করে স্ট্যাটাস দিয়ে থাকেন। যা দেখে ভক্তরা মনে করেন নায়িকার ডিভোর্স হয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিবারই মাহি বলেন, এই খবর পুরোপুরি গুজব। তিনি বলতেন, ‘আমার যখন মন খারাপ থাকে তখন এই ধরনের স্ট্যাটাস দিয়ে থাকি। এর মানে এই নয় যে, অপুর সঙ্গে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমার যখন অনেক রাগ হয় তখন আসলে মনে থাকে না যে আমি কে! জাস্ট নিজের রাগ এড়ানোর জন্য মূলত এসব স্ট্যাটাস দিই! ওকে (অপু) তো ২৪ ঘণ্টায় আমি ২৭ বার ছেড়ে দিই!’ এতদিন গুজব থাকলেও এবার সত্যি সত্যি ডিভোর্স হয়ে গেছে নায়িকার। শনিবার রাত দেড়টার দিকে মাহি তার ফেসবুক পোস্টে ডিভোর্সের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষটার সঙ্গে থাকতে না পারাটা অনেক বড় ব্যর্থতা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শ্বশুরবাড়ির মানুষগুলোকে আর কাছ থেকে না দেখতে পাওয়াটা, বাবার মুখ থেকে মা জননী, বড় বাবার মুখ থেকে সুনামাই শোনার অধিকার হারিয়ে ফেলাটা সবচেয়ে বড় অপারগতা। আমাকে মাফ করে দিও। তোমরা ভালো থেকো। আমি তোমাদের আজীবন মিস করব। এবার আর ‘নাটক’ নয়, মাহি জানিয়েছেন, স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবনের ইতি টানছেন। তিনি বলেন, বিচ্ছেদ হয়েছে এটা সত্য। এর বেশি কিছু জানাতে চাই না।

সম্প্রতি আরও একটি সম্পর্কে ‘নাটক’ চলছে! সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যানসি ও তার দ্বিতীয় স্বামী নাজিমুজ্জামান জায়েদ নাকি অনেকদিন ধরেই একসঙ্গে থাকছেন না! ২৫ এপ্রিল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এই গায়িকা। ন্যানসি বলেন, ‘এতদিন বুকে একটা ভার অনুভব করছিলাম। কিন্তু এখন খুব হালকা লাগছে। বিষয়টি শেয়ার করে আমি বেশ তৃপ্তি অনুভব করছি। কারণ এটা চেপে রাখার মানে হয় না।’ একসঙ্গে না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারণটা আমি নিজেও সেভাবে জানি না! তবে আমাদের সম্পর্কটা বেশ শীতল হয়ে যাচ্ছিল। মনে হলো, এভাবে আর একসঙ্গে থাকা যায় না। তার পরই এমন সিদ্ধান্ত নিলাম। তবে জায়েদের সঙ্গে আমার কোনোদিনই বিচ্ছেদ হবে না!’ ফের বিয়ে প্রসঙ্গে এই গায়িকা বলেন, ‘আবার বিয়ের প্রশ্নই ওঠে না। এখন আমার মেয়ে রোদেলার বিয়ের প্রস্তাব আসছে! আমি কোনোভাবেই আবার বিয়ের কথা ভাবছি না। সময়ের ওপরই সব ছেড়ে দিয়েছি। তবে জীবন একটাই। আমি জীবনটাকে জটিলতার মাঝে রাখতে চাই না। জায়েদের সঙ্গে আমি থাকি আর না থাকি এটা কখনো হবে না।’

ফেসবুকে গত বছর তারকা দম্পতির যে ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি চমকের জন্ম দিয়েছে তা হলো জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ও তার স্ত্রী নাজিয়া হাসান অদিতির বিচ্ছেদ। দীর্ঘ ৯ বছরের দাম্পত্য জীবন ছিল অপূর্ব ও অদিতির। ২০১১ সালে বিয়ে করেছিলেন তারা। শোবিজে তাদের আদর্শ দম্পতি হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু গেল বছরের ১৭ মে ফেসবুকে ভেসে ওঠে তাদের বিচ্ছেদের বিষয়টি। অপূর্ব ও অদিতি দুজনেই নিজ নিউ সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সেদিন রাতে এক স্ট্যাটাসে অপূর্ব তালাকের কথা স্বীকার করে তার জন্য এবং সাবেক স্ত্রী অদিতি এবং তাদের সন্তানের জন্য দোয়া চান। সেখানে অপূর্ব লেখেন, ‘বেদনার সঙ্গে আমি সবাইকে জানাচ্ছি যে নাজিয়া হাসান অদিতির সঙ্গে আমার ৯ বছরের দুর্দান্ত যাত্রাটি অপ্রত্যাশিতভাবে থেমে গেল। আমরা এমনটা চাইনি। তবে আমাদের জীবন এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে।’

গত বছরই ফেসবুকে আরও একটি বিচ্ছেদের খবরে হতাশ হয়েছে অনেকেই। ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী হারুন অর রশীদ অপুর সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন টিভি অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। কিন্তু বিয়ের এক বছর ৯ মাসের মাথায় বিচ্ছেদ ঘটান ফারিয়া। তবে অপুর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবেন বলে জানান তিনি। আর এই বিচ্ছেদ নিয়ে গণমাধ্যমে যেন মুখরোচক কিছু না লেখা হয় সেই অনুরোধও করেন ফারিয়া।

গত ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে ফারিয়া লেখেন, আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না, আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি! ঠিক সেভাবেই আমি আর অপু অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করেছি একসঙ্গে থাকতে! কিন্তু বিষয়টা একটা পর্যায়ে খুব কঠিন হয়ে যায়! জীবনটা অনেক ছোট, এত কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার কী দরকার? এটা ভেবে আমরা এ বছরের শুরু থেকেই সিদ্ধান্তে আসি আমরা আর একসঙ্গে থেকে কষ্টে থাকতে চাই না! আমাদের বৈবাহিক জীবনের অবসান ঘটিয়ে আবারও ৫ বছরের পুরনো বন্ধুত্বে ফিরে গিয়েছি। বিবাহে বিচ্ছেদ হয়, কিন্তু ভালোবাসার বিচ্ছেদ নেই! বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ নেই!

বাংলাদেশের শোবিজে আদর্শ দম্পতির উদাহরণ হিসেবে চলে আসে তাহসান ও মিথিলার নাম। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২০১৭ সালে এই দুই তারকার সংসার ভেঙে যায়। নিজেদের বিচ্ছেদের কথা স্বীকার করে সেই বছরের ৪ অক্টোবর দুপুরে ফেসবুকে খবরটি জানান তাহসান। সেদিন তাহসান ও মিথিলা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে। কয়েক মাস ধরেই আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম কোনো চাপে না থেকে আলাদা থাকার। আমরা জানি, আমাদের এই সিদ্ধান্তে অনেকে ব্যথিত হবেন। সেজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তাহসান ও মিথিলা ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আইরা তেহরীম খান তাহসান-মিথিলা দম্পতির একমাত্র সন্তান। সম্প্রতি আবার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। কারণ বিচ্ছেদের পর প্রথমবারের মতো ১৫ মে রাতে এক লাইভ শোতে অংশ নেন সাবেক এ তারকা জুটি। বিচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে ভক্তদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেলেও তারকা সহকর্মীদের মধ্যেই কেউ কেউ এটিকে ‘ভালোভাবে নেননি’ বলে জানালেন মিথিলা। এমনকি দুজন সহকর্মীর বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। সম্পর্ক, বিয়ে ও বিচ্ছেদ কোনো অপরাধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *