মদনটাকের ঘর আলোকিত করে এলে দু’টি ছানা

কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


রাতুল মন্ডল নিজস্ব প্রতিবেদকঃ “মদনটাক” একসময় দেশের প্রায় সব জেলাতে এ পাখিটির ছিলো অবাধ বিচরণ। কিন্তু কালের বিবর্তণে এখন এই পাখিটি স্থান নিয়েছে মহাবিপন্নের তালিকায়। তবে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক প্রতিষ্ঠালগ্নে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি মদনটাক উদ্ধার করে আনা হয়েছিল। পার্কের বেষ্টনীতে এ পাখিটিকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরী করে দেয়ায় বড় হচ্ছে তার পরিবারের সদস্যের সংখ্যা।

গত শুক্রবার ও মঙ্গলবার সাফারী পার্কের মদনটাকের ডেরায় দু’টি ছানা ফুটেছে। মদনটাক থেকে ছানার জন্ম হওয়ায় মহাবিপন্নের তালিকায় থাকা পাখিটি ঘিরে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে পার্কে। নতুন ছানা নিয়ে মদনটাকের পরিবারে নতুন সদস্য নিয়ে মোট সংখ্যা পৌঁছলো ৯টিতে।

সাফারী পার্কের বন্যপ্রাণী সুপারভাইজার (বন্যপ্রাণী পরিদর্শক) আনিছুর রহমান বলেন, এ পাখি সাধারণত বড় বিলের কাছে, নদীর মোহনায় বসবাস করে থাকে। তবে আমাদের দেশ ছাড়াও সারা বিশ্বে এর দেখা মেলে খুবই কম। স্থানীয় ভাবে অনেকেই মদনটাক পাখিকে হারগিলাও বলে থাকে। মদনটাক প্রধানত জলচর পাখি হিসেবে পরিচিত। এরা সিকোনিডাই পরিবারভূক্ত বিধায় এ গনের অন্যান্য প্রজাতির ন্যায় এরও নগ্ন ঘাড় এবং মাথা রয়েছে। মাছ, ব্যাঙ, সরীসৃপ এবং অন্যান্য মেরুদন্ডী প্রাণী এদের প্রধান খাদ্য। প্রজনন মৌসুম ব্যতীত একাকী নিভৃতচারী পাখি হিসেবে এরা পরিচিত। ফেব্রুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত এরা বাসা বাঁধে। ডালপালা দিয়ে তৈরী বাসায় স্ত্রী মদনটাক ৩-৪টি পর্যন্ত ডিম দেয়। ২৮/৩০দিন পর ডিম থেকে ছানার জন্ম হয়। এরা তেমন কোন আওয়াজ করে না। এদের ওজন হয় ৫/৭কেজি পর্যন্ত।

তিনি আরো বলেন, মদনটাকের মূল অস্তিত্ব দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই। আমাদের দেশে বিলুপ্ত হয়ে গেলেও সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশে মাঝে মধ্যে এর দেখা মেলে। ইতিমধ্যেই সিঙ্গাপুর ও চীন থেকে এরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণীবিদ আলম শাইন বলেন, প্রকৃতিতে মদনটাক এক সময় খুব দেখা গেলেও বর্তমানে প্রাণীটি মহাবিপন্ন। তবে মাঝে মধ্যে সুন্দরবন ও কুড়িগ্রামের দিকে এর দেখা মিলতো, বর্তমানে তাও শোনা যাচ্ছে না। সাফারী পার্কের বেষ্টনীতে বন্ধ পরিবেশে মহাবিপন্নের তালিকায় থাকা মদনটাক থেকে বাচ্চা পাওয়া এটা অবশ্যই একটি ভাল দিক। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় হয়তো এই সাফারী পার্ক থেকেই মদনটাক পরিবেশে ফিরতে পারবে।

সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে জলবায়ু পরিবর্তন, বসবাসের জায়গা নষ্ট, ফুড চেইনে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হওয়ায় মদনটাকের অস্তিত্ব আজ মহাবিপন্নের তালিকায়। তবে আমাদের সাফারী পার্কের মদনটাকের ডেরায় তাদের বসবাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরী করায় ছানার জন্ম হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সবার মধ্যেই আশার সঞ্চার হচ্ছে। সাফারী পার্কে মদনটাকের ডেরায় চলতি মৌসুমে একটি স্ত্রী মদনটাক তিনটি ডিম দিয়েছিল তা থেকে দুটি ছানার জন্ম হয়েছে। আমাদের আশা আরো একটি ছানার জন্ম হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *