ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, আহত ২২

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া); ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় আজ শনিবার দুই দফা ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ২২ জন আহত হয়। চারজনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নৌকাডুবি ও বহু গাছপালা উপড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ সড়কে পানি জমে আছে। তলিয়ে গেছে তিনটি বাজার। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম।
স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোর পাঁচটা ও সকাল নয়টায় দুই দফা ঝড় ও বৃষ্টিতে সদর উপজেলাসহ চুনটা, কালিকচ্চ, পানিশ্বর, পাকশিমুল, অরুয়াইল ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নয়টার দিকে বয়ে যাওয়া ঝড় আধা ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। ঝড়ে চুনটা ইউনিয়নের বড়াইল গ্রামের শরাফত মিয়া ও তাঁর দুই শিশুকন্যা সমলা (৭) ও বুশরা (৬) টিনের ঘরের নিচে চাপা পড়ে আহত হয়। গ্রামবাসী তাদের উদ্ধার করে। পরে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়।

ভোর পাঁচটার দিকে বয়ে যাওয়া ঝড়টি ঘণ্টা খানেক স্থায়ী ছিল। একই সঙ্গে ছিল প্রচণ্ড বৃষ্টি। ঝড়ে কালিকচ্চ ইউনিয়নের ধরন্তি এলাকায় আজম ব্রিক নামের ইটভাটার একটি পাকা ঘর ভেঙে পড়েছে। অপর একটি ঘরের টিন উড়ে গেছে। ওই ইটভাটার ১৯ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অন্য চারজনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মামুন মিয়া (৩০), সোহাগ মিয়া (৩৮), আবদুল লতিফ (৬০) ও অহিদ মিয়া (৬৫)।

ঝড়ে পানিশ্বর বাজার এলাকায় মেঘনা নদীতে আড়াই মেট্রিকটন ধানবোঝাই একটি নৌকা ডুবে গেছে। পানিশ্বরের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দীন ইসলাম মিয়া জানান, নদীর তীরের কাছাকাছি ছিল নৌকাটি। এতে কয়েকজন মাঝি থাকলেও তাঁরা সাঁতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন। নৌকাটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

উপজেলার নোয়াগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ঘর ঝড়ে দুমড়েমুচড়ে গেছে।

ঝড়ের পর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুব কম। বেলা ১১টার দিকে উপজেলা সদরের পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো শিক্ষার্থী আসেনি। শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা। তবে শিক্ষকেরা এসেছেন। এই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১ হাজার ৯৩ জন। সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তবে অর্ধেকসংখ্যক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখা গেছে শাহবাজপুর উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখানের ১ হাজার ৮৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮০০ জন উপস্থিত ছিল।

ঝড়ের পর থেকে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সরাইল উপজেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত রায় বলেন, ঝড়ে বিধ্বস্ত বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করা হচ্ছে। তবে আজ দিনের মধ্যে সংযোগ দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।

এদিকে উপজেলার অধিকাংশ পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সেসব সড়ক থেকে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সড়কগুলো অনুপযোগী হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী। এ ছাড়া উপজেলার সরাইল বৈকাল বাজার, প্রাত বাজার ও উচালিয়া বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ঝড়ে সহস্রাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউপির চেয়ারম্যান, সদস্য ও চৌকিদারদের চেষ্টায় সড়কে উপড়ে পড়া গাছগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে ইসরাত বলেন, দুই দফা ঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সেসব এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *