ব্যক্তিস্বার্থের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব, কীভাবে দেখছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব?

Slider রাজনীতি


বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান এবং সাবেক মেয়রের দ্বন্দ্ব যেভাবে প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে, তা দল এবং সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে বলে দলটির নেতাদের অনেকেই বলছেন।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং মন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ঘটনাগুলো তাদের জন্য ভাল লক্ষণ নয়। তিনি উল্লেখ করেছেন, তাদের নেতৃত্ব বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। দলটির তৃণমূলের নেতা কর্মীদের অনেকে মনে করেন, ব্যক্তিস্বার্থ থেকেই এ ধরনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে এবং এ জন্য মাঠপর্যায়ে তাদের পড়তে হচ্ছে নানা প্রশ্নের মুখে।

`পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না অনেক এমপি’
নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আবদুল কাদের মির্জার যে বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, তিনি তাতে বলেছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন-চারটি আসন বাদে তাদের অন্য এমপিরা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। মির্জার বক্তব্যে শুধু যে নিজ দলের এমপিদেরই সমালোচনা ছিল তাই নয়।

তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের ছোট ভাই । তাই তার সেই বক্তব্য ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। এর মাঝেই রাজধানীতে ঘটে আরেক ঘটনা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন একে অপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং মন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্যকে তাদের দল পৌরসভা পর্যায়ের একজন নেতার ‘ব্যক্তিগত মতামত’ হিসাবে দেখছে।

‘ভাল লক্ষণ নয়, তাদের নিবৃত্ত করা হবে’
তবে তিনি বলেন, ঢাকার বর্তমান এবং সাবেক মেয়রের পাল্টাপাল্টি দুর্নীতির অভিযোগ এবং প্রকাশ্য দ্বন্দ্বকে তারা অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন। `ঢাকা কিন্তু বাংলাদেশের রাজধানী। সবকিছুই পরিচালিত হয় ঢাকাকে কেন্দ্র করে। কাজেই ঢাকা শহরের মেয়র এবং সাবেক মেয়রের দ্বন্দ্ব। আমরা এটা খুবই সিরিয়াসলি দেখছি এবং চিন্তা করছি। এটা আমাদের জন্য ভাল লক্ষণ নয়, দল অবশ্যই গুরুত্বসহকারে নিয়েছে’ – বলেন ড: রাজ্জাক।

তিনি আরো বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তাদেরকে নিবৃত্ত করা হবে। তারা যে কথাই বলুক না কেন, তাতে যেন দলীয় শৃঙ্খলা মানা হয়, যাতে দল এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয়।’

আওয়ামী লীগের সিনিয়র আরো একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তাদের দল থেকে ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান ও সাবেক মেয়র দু’জনকেই দ্বন্দ্বে আর না জড়াতে বলা হয়েছে।

সেই প্রেক্ষাপটে দেখা গেছে, সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মানহানির দু’টি মামলা করা হয়। মঙ্গলবার শেখ ফজলে নূর তাপস সেই মামলা করার ব্যাপারে তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, অতি উৎসাহী দু’জন আইনজীবী মামলা দু’টি করেছে। তিনি তাদের মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছেন। সাঈদ খোকন বিবিসিকে বলেছেন, মামলা যেহেতু প্রত্যাহার করা হচ্ছে, সমস্যার কিছুটা সমাধান হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

তবে নির্বাচন এবং নোয়াখালী অঞ্চলের আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বক্তব্য দেয়া অব্যাহত রেখে আলোচনায় থাকা আবদুল কাদের মির্জা জানিয়েছেন, তাকে দল থেকে কিছু বলা হয়নি। তিনি তার ‘সত্য’ বক্তব্য অব্যাহত রাখবেন।

‘নানা প্রশ্নের মুখোমুখি’ স্থানীয় নেতারা
তবে ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগকে বিব্রত করছে বলে মনে করেন দলটির তৃণমূলের নেতারা মনে করেন। উত্তরের একটি বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী সৈয়দা শামসুন্নাহার মুক্তি বলেছেন, মাঠে তারা নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন।

‘ঢাকার বর্তমান এবং সাবেক মেয়র দু’জনই কিন্তু প্রভাবশালী। ফলে এখন যে দ্বন্দ্ব চরছে, এগুলো আমাদের মাঠে বিব্রত করে। প্রতিপক্ষরা আমাদের হেয় করে এবং অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।’

দেশের আরো কয়েকটি জেলা যেমন বগুড়া, যশোর, সিলেট, চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা কর্মীর সাথে কথা বললে তারাও বলেছেন, ব্যক্তিস্বার্থ থেকে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসছে এবং এই পরিস্থিতি তাদের দল ও সরকারের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দলটির মধ্যম সারির নেতাদেরও অনেকে পরিস্থিতিকে একইভাবে দেখছেন বলে মনে হয়েছে।

তবে সাবেক মন্ত্রী আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, যে ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে এসেছে, সেগুলো দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা হবে। একইসাথে তিনি বলেছেন,ঘটনাগুলোকে বড় কোন বিষয় হিসাবে দেখারও কিছু নেই বলে তিনি মনে করেন।

‘দীর্ঘদিনের সংসারেও ছোটখাট রাগ-অভিমান বা ভুল-ভ্রান্তি থাকতেই পারে। কিন্তু প্রকাশ্যে এসে পড়লেই যে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে, তা নয়। তবে এটা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন আছে।’

‘কারণ নিজেরা কাদা ছোঁড়াছুড়ি করলে সেটা দলগত বা ব্যক্তিগতভাবে বলেন, কোন দিক থেকেই ভাল হবে না’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, তাদের সরকারের টানা ১২ বছর হয়েছে এবং এই লম্বা সময়ে কিছু ‘পাওয়া না পাওয়ার’ প্রশ্ন এবং বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যক্তিস্বার্থের কারণে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। এগুলোর বহিপ্রকাশ বিভিন্ন জায়গায় ঘটলে তখন তা আরো ক্ষতিকর হতে পারে – এমন আলোচনা তাদের মধ্যে রয়েছে।

সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *