কালীগঞ্জে করোনা ভাইরাসের তথ্য প্রকাশে অনিয়মে তুমুল সমালোচনা

Slider জাতীয়


মো: সাজ্জাত হোসেন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের কালীগঞ্জে বর্তমান সময়ের মহাতঙ্ক মহামারী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের হাত থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার জনগনকে রক্ষা ও সচেতনের লক্ষ্যে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে সকাল ১১টা পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করে, তা পরীক্ষা করার জন্য ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এ পাঠানো হয়।

২৪ ঘন্টা অন্তর অন্তর এই রিপোর্টের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করার কথা থাকলেও, গত কয়েক দিন যাবত কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কতৃপক্ষ রিপোর্টের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করেছে না। যা কালীগঞ্জ বাসীর জন্য ভালোর চেয়ে খারাপটাই বেশি বয়ে আনছে। অনাকাঙ্খিত এই সমস্যার জন্য ঢাকা জজ কোর্টের একজন অ্যাডভোকেট বা আইনজীবী মোহাম্মদ ছাত্তার মোল্লা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে (Mohammad Sattar Mullah) ১৯ই এপ্রিল ২০২০ ইং রোজ রবিবার বিকাল ৪ টা ২১ মিনিটে একটি স্ট্যাটাস বা পোস্ট করেছেন।

সকলের অবগতির জন্য ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট বা আইনজীবী মোহাম্মদ ছাত্তার মোল্লার স্ট্যাটাস বা পোস্টটি তুলে ধরা হলো-

করোনা ভাইরাসে অাক্রান্তদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশে অাইনগত বাধ্যবাধকতা এবং কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গুরুতর অবহেলা একটি অাইনগত পর্যালোচনা।

গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের অাক্রমণে মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ এলাকা সমূহের অন্যতম একটি। কালীগঞ্জ উপজেলায় গত ১৮.০৪.২০২০ ইং তারিখ পর্যন্ত অাক্রান্তের মোট সংখ্যা ৪৩ জন (পজেটিভ রিপোর্টেড)। তাছাড়া অাক্রান্ত কিন্তু এখনো নমুনা পরীক্ষার অাওতায় অাসেনি এমন সংখ্যা নিশ্চয়ই অারো অনেক রয়েছে।

এমতাবস্থায় অতি উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বা কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যথাযথভাবে কালীগঞ্জ উপজেলায় করোনা ভাইরাসে অাক্রান্তদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করছে না। বিশেষকরে অাক্রান্তদের নাম, বাসস্থান, গ্রাম, মহল্লা বা এলাকার নাম সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রকাশ করছে না।

একজন অাইনজীবী তথা উপজেলায় বসবাসকারী সচেতন নাগরিক হিসেবে অাইনের অালোকে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বা কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপরোক্ত কর্মকান্ডের সঠিকতা বা বৈধতা যাচাই করতে চাই।

সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ৫(১)(গ) ধারা অনুযায়ী- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবেলা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকি হ্রাসকরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

উক্ত একই অাইনের ১১(২) ধারা অনুযায়ী- মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সংক্রামক রোগ সীমিত বা নির্মূল করা সম্ভব নহে, তাহা হইলে তিনি সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বা সংক্রমিত স্থানে অন্য কোনো ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন।

অারো উল্লেখ্য যে, উক্ত অাইনের ৩০ ধারার অর্পিত ক্ষমতাবলে উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে উক্ত অাইনের উদ্দেশ্য এবং কার্যাবলী সুসম্পন্ন করার দায়িত্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতার উপর বর্তায়।

এমতাবস্থায়, করোনা ভাইরাসের মতো “প্রতিষেধক বিহীন” বৈশ্বিক মহামারী সংক্রামক রোগ সংক্রান্ত উদ্ভুত অবস্থা মোকাবেলা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকি হ্রাসকরণ, সার্বিক গণসচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূলের জন্য করোনা ভাইরাসে অাক্রান্তদের নাম, বাসস্থান, গ্রাম, মহল্লা বা এলাকার নাম সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করা অতীব জরুরী এবং প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ।

তাছাড়া যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ সীমিত বা নির্মূল করা সম্ভব নহে, তাই সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বা সংক্রমিত স্থানে অন্য কোনো ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে করোনা ভাইরাসে অাক্রান্তদের নাম, বাসস্থান, গ্রাম, মহল্লা বা এলাকার নাম সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করা অতীব জরুরী এবং প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ।

উক্ত সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ২৪(১) ধারা অনুযায়ী- যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন, বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তাহার নিকট গোপন করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং ২৪(২) ধারা অনুযায়ী- যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক কালীগঞ্জ উপজেলায় করোনা ভাইরাসে অাক্রান্তদের সুনির্দিষ্ট তথ্য জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অাক্রান্তদের নাম, বাসস্থান, গ্রাম, মহল্লা বা এলাকার নাম সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ না করা বা গোপন করার ফলে অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার অাসংঙ্কা তৈরী হয় যা সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করার অবকাশ বা ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

উল্লেখিত অাইনের ২৪(১) ধারা অনুযায়ী- কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উক্ত কার্যক্রমকে অপরাধ হিসেবে ব্যাখ্যা করার পর্যাপ্ত উপাদান রয়েছে বলে অামি মনে করি যা উক্ত অাইনের ২৪(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়াও তথ্য অধিকার অাইন, ২০০৯ এর ৪ ধারা অনুযায়ী উক্ত আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে৷ অধিকন্তু, উক্ত তথ্য অধিকার অাইন, ২০০৯ এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উহার গৃহীত সিদ্ধান্ত, কার্যক্রম কিংবা সম্পাদিত বা প্রস্তাবিত কর্মকান্ডের সকল তথ্য নাগরিকগণের নিকট সহজলভ্য হয়, এইরূপে সূচিবদ্ধ করিয়া প্রকাশ ও প্রচার করিবে এবং ৬(২) ধারা অনুযায়ী উপ-ধারা (১) এর অধীন তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে কোন কর্তৃপক্ষ কোন তথ্য গোপন করিতে বা উহার সহজলভ্যতাকে সঙ্কুচিত করিতে পারিবে না।

উল্লেখিত প্রেক্ষাপট, অাইন এবং অাইনগত ব্যাখ্যার অালোকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে বিনীত নিবেদন এই যে, অনতিবিলম্বে ইতোমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলায় যে সকল লোক করোনা ভাইরাসে অাক্রান্ত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যারা অাক্রান্ত হবে তাদের নাম, বাসস্থান, গ্রাম, মহল্লা বা এলাকার নাম সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করুন। অন্যথায় জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অাক্রান্তদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ না করা বা গোপন করার ফলে কালীগঞ্জ উপজেলায় করোনা ভাইরাসের মরণঘাতী বিস্তারের ঝুঁকির দায় অাইন অনুযায়ী অাপনি এড়াতে পারবেন না।

সদয় অবগতি- কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে সনিবন্ধ অনুরোধ উল্লেখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য।

বিনীত –
মোহাম্মদ ছাত্তার মোল্লা
এল.এল.বি. (সন্মান), এল.এল.এম. (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)
অ্যাডভোকেট, ঢাকা জজ কোর্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *