কালীগঞ্জে একই পরিবারের ৪ বাকপ্রতিবন্ধী কোন ত্রাণ পায়নি

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয়

মো: সাজ্জাত হোসেন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি: বর্তমান বৃহদায়তন অর্থ ব্যবস্থায় দেশের আপামর জনসাধারণের মধ্যে, দেশ যখন মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বিষন্ন, ঠিক তখনই সরকারি, বেসরকারি, বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা ও অনেকে ব্যক্তিগত ভাবে উক্ত সমস্যা উত্তরনে ত্রাণ বা বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন।

কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের এ দুঃসময়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জের বাকপ্রতিবন্ধি তারা মিয়া, আবু তাহের, অবিবাহিত বাকপ্রতিবন্ধী রাহিমা বেগম ও তালাকপ্রাপ্ত এক সন্তানের জননী বাকপ্রতিবন্ধী নুর আক্তার তারা উভয়ে একই পরিবারের ভাই বোন। তাদের ৬ ভাই বোনের মধ্যে সুস্থ এক ভাই এক বোন। সুস্থ ভাই আবু বকর ও বোন রহিমা বেগম। তাদের বাড়ি কালীগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্বাটি পশ্চিম পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক সংলগ্ন।

বড় ভাই আবু বকর কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। নিজের পরিবার নিয়ে আলাদা ঘর করে বাড়ির দক্ষিণ পাশে থাকে। অপর সুস্থ বোন রহিমা বেগম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পূবাইলের বসুগাঁও এলাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করে পুরো পরিবারটি চালিয়ে আসছেন।

মহামারী করোনা ভাইরাসে এই ক্রান্তিলগ্নে অসহায় হতদরিদ্র ও কর্মহীন মানুষদের খাদ্যাভাব দূর করতে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রতিনিয়ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোনো খাদ্য সহায়তা।

অজ ১৯ই এপ্রিল ২০২০ ইং রোজ রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দুবার্টি গ্রামের মৃত আব্দুল হাই মৃত্যুর সময় ৩ ছেলে ৩ মেয়ে রেখে মারা যান। তাদের মধ্যে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে মোট ৪ জন বাকপ্রতিবন্ধী। কি কারণে এই ৪ জন বাকপ্রতিবন্ধীর পরিবার কোনো ধরনের খাদ্য সহায়তা পাননি এ ব্যাপারে তাদের সুস্থ দুই ভাই বোনের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, সারা দেশে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের মতো অনেকে নাখেয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে। এতে আমাদের আর কি করার আছে। মহান আল্লাহ পাক আমাদের কপালে যা লিখে রাখছে তাই হবে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি ভাবে জারীকৃত লকডাউন মানতে, কর্মশীল মানুষ ঘরমুখী থাকতে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সরকারের নির্দেশে গার্মেন্টস বন্ধ থাকায় পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম রহিমা বেগম বেকার হয়ে বাড়িতে বসে আসেন। বাকপ্রতিবন্ধী ভাই বোনদের নিয়ে তিনি মানবতার জীবন কাটাচ্ছেন। এখনোও পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি ও পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনো খাদ্য সহায়তা তারা পাইনি বলে অভিযোগ করেন গার্মেন্টসকর্মী রহিমা বেগম।

তিনি বলেন, গার্মেন্টসে চাকুরি করে মা ও চার বাকপ্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের নিয়ে সংসার কোনো রকম চালিয়ে যাচ্ছিলাম। দেশে আসা মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যায়। কর্মহীন হয়ে পড়ায় টাকার অভাবে মা ও চার বাকপ্রতিবন্ধী ভাই বোনদের মুখে তিন বেলা দুমুঠো অন্ন তুলে দিতে পারছিনা। ওই চার ভাই বোনের নামে এখনোও পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করা হয়নি। তালাকপ্রাপ্ত বাকপ্রতিবন্ধী নুর আক্তারের একমাত্র মেয়ে সানজিদা আক্তার রিয়া তুমুলিয়া ইউনিয়নের মিশন এলাকার সেন্ট মেরীস স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ পৌর ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ মোমেন জানান, ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে ওই পরিবারের একজনকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে এখনোও পর্যন্ত কোনো ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়নি। এই বিষয়ে মেয়রের সাথে কথা হয়েছে, খুব শিগরই পৌর এলাকায় ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য তাদের কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে। দেশের পরিবেশ স্বাভাবিক হলে তারা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *