পাইলট নিয়োগে অনিয়ম, সাবেক এমডিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

Slider জাতীয় সারাদেশ


ঢাকা: বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। নিয়োগ পরীক্ষায় নিয়ম ভেঙে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ৩২ জনকে। ২২ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করানোর অভিযোগও পাওয়া যায়। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার বিকালে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আসামিরা হলেন-বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদ, পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল, বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারের (বিএটিসি) অধ্যক্ষ পার্থ কুমার পন্ডিত এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপক (নিয়োগ) ফখরুল হোসেন চৌধুরী। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০১৮ সালে ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের দায়িত্বকালীন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স নির্ধারণে বিমানের প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসরণ করেননি। নিজেদের ইচ্ছেমত ব্যাখ্যা দিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এবং পরবর্তীতে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদের ভাতিজাসহ ৩০জন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং ওই প্রার্থীদের অবৈধ সুবিধা প্রদান করেন।

লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মানবন্টন ম্যানুয়াল অনুযায়ী না করে মৌখিক পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর রেখে বিশেষ প্রার্থীদের অবৈধ সুবিধা প্রদান এবং লিখিত পরীক্ষায় গ্রেস প্রদানের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করে অবৈধভাবে বিমানের ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দুদক জানায়, ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে ভাইভা পরীক্ষায় সব পরিচালকসহ কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ১০ জন। গত জানুয়ারিতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ২২ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করানো হয়েছে। অথচ লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর প্রাপ্ত অনেককেই মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করানো হয়েছে। অন্যদিকে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার সঙ্গে আবার ১০০ নম্বরের ভাইভা নেয়ার কোনো নজির বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিধিমালায় নেই। এছাড়া পাইলট নিয়োগের বয়স যুক্তিহীনভাবে ৪০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে নীতিহীন কাজ হয়েছে, যা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। অর্থ্যাৎ ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে ৩২ জনকে নিয়োগ প্রদান নিয়ম বহির্ভূত ছিল। আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক অসদাচরণ করে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ অনুসন্ধানে এর আগে সাবেক এমডি মোসাদ্দিক আহমেদ, সাবেক এমডি ও পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন ফারহাত হোসেন জামিল, ব্যবস্থাপক (নিয়োগ) ফখরুল হোসেন চৌধুরি ও বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টার (বিএটিসি) অধ্যক্ষ পার্থ কুমার পন্ডিতসহ বিমানের বর্তমান ও সাবেক সাত পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও পাইলট নিয়োগে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। অভিযোগের বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্মসচিব জনেন্দ্র নাথ তদন্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *