ফারাক্কার ১১৯ স্লুইসগেট খোলা, হু হু করে ঢুকছে পানি

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি জাতীয়

ঢাকা: ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশ প্রবল বন্যায় ডুবছে। বন্যার কারণের মৃত ব্যক্তির সংখ্যা শতাধিক। এরপরই ফারাক্কা ব্যারেজের সব কটি স্লুইসগেট খুলে দিয়েছে দেশটি। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় হু হু করে পানি ঢুকছে।

ফারাক্কার সব স্লুইসগেট খুলে দেওয়ায় প্রবল গতিতে ভাগীরথী, মহানন্দা ও পদ্মার পানি বাড়ছে। আর কপালে চিন্তার ভাঁজ ওই তিন নদীর পাড়ের মানুষের।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, হিমালয়–সন্নিহিত এলাকায়, বিশেষ করে নেপালে প্রবল বর্ষণের কারণে সেখানকার নদীগুলোর পানির স্তর বাড়তে শুরু করেছে। এ কারণে ভারতের উত্তর বিহার এলাকার নদীগুলোর পানি বাড়ছে। এর সঙ্গে পুরো বিহার রাজ্য ভাসছে প্রবল বন্যায়। বিহার থেকে আসা বিপুল পানি আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি ফারাক্কা ব্যারেজে। তাই গতকাল সোমবার রাতেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া ফারাক্কার ১১৯টি স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। সব স্লুইসগেট খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় হু হু করে ঢুকছে পানি। এতে ভারতের মুর্শিদাবাদের একাংশ ও মালদহের বেশ কিছু এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে।

ফারাক্কার স্লুইসগেটগুলো খুলে দেওয়ায় ভারতের ফুলহার, মহানন্দা ও কালিন্দী নদীতে বেড়েছে পানি। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে ফুলহার ও গঙ্গার পানি।

এদিকে রাজশাহীতে আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় পদ্মায় পানি চার সেন্টিমিটার বেড়েছে। আর আগের দিন সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে তিন সেন্টিমিটার। পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার নিচ নিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার।

রাজশাহীতে দিনভর সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন খবর ছড়িয়েছে যে ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশে বন্যার কারণে দেশটি ফারাক্কার সব গেট খুলে দিয়েছে। এ জন্য রাজশাহীতে পদ্মায় পানি বাড়ছে। অবশ্য রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সাধারণত বাংলাদেশের পাঙ্খা পয়েন্টে ফারাক্কার পানি বৃদ্ধি পেলে ভরা মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় ছয় ঘণ্টার মধ্যে সেই পানি চলে আসে। পাঙ্খা পয়েন্ট থেকে রাজশাহীর দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।

ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার কারণে রাজশাহীতে পদ্মার পানি বাড়ছে কি না, সে ব্যাপারে গতকাল রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রতিবছরই জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খোলা থাকে। এটি নিয়মিত ব্যবস্থাপনার একটি অংশ। প্রকৃতপক্ষে, কয়েক দিন ধরে গঙ্গা ও পদ্মা অববাহিকায় নিম্নচাপজনিত অতিবৃষ্টিতে পানি উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে উজানে ভারতে বিভিন্ন জেলায় এবং ভাটিতে বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তার জন্য সতর্কতা ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহীতে গত রোববার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ১১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মা নদী বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আজ দুপুর ১২টায় ৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই পানি বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীর জেলার চরাঞ্চলের গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে। পবা, বাঘা ও গোদাগাড়ীতে ভাঙনও দেখা দিয়েছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, রাজশাহীতে গত আগস্ট মাসে পদ্মার পানি দ্বিতীয়বারের মতো বেড়েছিল। তখন রাজশাহীর দরগাপাড়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১৬ দশমিক ৭১ মিটার উঠেছিল। তারপর থেকে কমে যায়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ফের পানি বাড়া শুরু হয়েছে। ওই সময় পানি উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৩৯ মিটার। গত ২১ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটায় পদ্মায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ২০ মিটার। তারপর ধীরে ধীরে পদ্মা পানি বাড়তে থাকে।

২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। তখন পানি ১৮ দশমিক ৭০ মিটার উচ্চতায় উঠেছিল। অর্থাৎ সে সময় পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।

আবহাওয়া দপ্তর বলছেন, রাজশাহীতে রোববার সকাল নয়টা থেকে গতকাল সকাল নয়টা পর্যন্ত ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে হয়েছে ৫৪ মিলিমিটার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে হয়েছে ৬৮ মিলিমিটার। এই পানি নদীতে জমা হয়েছে। এসব কারণে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে। ভারতেও বৃষ্টি হয়েছে। উজানের পানিও বাংলাদেশে আসবে।

এদিকে গত দুই সপ্তাহের পানি বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিরপুর ও মধ্যচরে ব্যাপক বন্যা ও নদীভাঙন শুরু হয়েছে। মধ্যচরে পদ্মার তীব্র ভাঙনে আড়াই শ পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একই অবস্থা হয়েছে রাজশাহী বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নের প্রায় পুরোটাই পানিতে তালিয়ে গেছে। ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুল আজম জানান, সেখানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে সেখানকার প্রায় ১২০টি পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। তাঁর ইউনিয়নে মোট ৩ হাজার ৬০০ পরিবারের মধ্যে আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেখানে পানি দ্রুত বাড়ছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউপির চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বলেন, তাঁর ইউনিয়নের মধ্যচর পদ্মার ভাঙনে একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। আর চরখিদিরপুরের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শতভাগ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *