শাহজাদপুর সাব-রেজিষ্ট্রারের ঘুষের ভিডিও ভাইরাল

Slider জাতীয় টপ নিউজ

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার সুব্রত কুমার দাসের ঘুষ গ্রহণের বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে জেলা-উপজেলাজুড়ে চলছে নানা গুঞ্জণ।

এদিকে, দলিল লেখকরাও দাবি করেছেন, ওই অফিসে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না। এসব বিষয় নজরে আসার পর সাব-রেজিষ্ট্রারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এবং জেলা রেজিষ্ট্রার।

দলিল লেখকরা বলছেন, ঘুষ ছাড়া তিনি কোন দলিলই পাশ করেন না। নিজ হাতে ঘুষের টাকা বুঝে নিয়ে তারপর দলিলে স্বাক্ষর করেন সাব-রেজিষ্ট্রার সুব্রত কুমার দাস। এজন্য তাকে দলিল প্রতি দেড় হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। আর টাকা না দিলে ফাইল নড়ে না তার টেবিল থেকে।
যে কারণে দলিল লেখকরা দাতা ও গ্রহীতাদের কাছে থেকে তা আদায় করে দিতে বাধ্য হন। এর প্রতিবাদে দলিল লেখকরা আন্দোলন করেও কোন লাভ হয়নি। উল্টো ৫ জন দলিল লেখক সাসপেন্ড হয়েছেন।

দলিল লেখক সোহেল রানা জানান, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সুব্রত কুমার দাস শাহজাদপুর সাব রেজিষ্ট্রার হিসাবে যোগদান করেন। এরপর থেকেই তিনি এ অফিসটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন অফিসের সুমন ও আবদুস সালাম নামে দুই কর্মচারি।

তিনি আরও বলেন, হেবা ঘোষণাপত্রের দলিলের জন্য সরকারি ফি নির্ধারণ করা আছে ৬৪০ টাকা ও এনফি ২৪০ টাকা। সেখানে সরকারি ফি ব্যতিত প্রতিটি দলিলের জন্য সাব-রেজিষ্ট্রার সুব্রত কুমার দাস কখনও নিজ হাতে আবার কখনো সুমন বা আবদুুস সালামের মাধ্যমে সর্বনি¤œ ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়ে থাকেন। প্রমাণ হিসাবে এ সংক্রান্ত গোপন ভিডিও ফুটেজ তার কাছে সংরক্ষিত আছে বলেও জানান এই দলিল লেখক।

আরেক দলিল লেখক ওসমান গণি জানান, কর্তারা যেভাবে চালান, আমরা সেভাবেই চলি। এ বিষয়ে এর চেয়ে আর বেশি বলার দরকার পড়ে না। বিষয়টা সবাই বোঝে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কায়েমপুর ইউনিয়নের ব্রজবালা গ্রামের মানিক বলেন, একটি হেবার ঘোষণাপত্র দলিল রেজিষ্ট্রি করতে ওই অফিসে গিয়েছিলাম। প্রথমদিন আমাকে নানা অজুহাতে দলিল রেজিষ্ট্রি না করে পরে যেতে বলেন। কয়েকদিন পর অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে রাজি হলে আমার দলিল রেজিষ্ট্রি করে দেয়া হয়।

সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের ভেন্ডার মোস্তাক আহম্মেদ জানান, দলিল প্রতি ৩০০ টাকা করে না দিলে তার স্ট্যাম্পের দলিল রেজিষ্ট্রি করা হয় না। সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে তথ্য দেয়ায় তার সরবরাহকৃত স্ট্যাম্পের দলিল রেজিষ্ট্রি বন্ধ রেখেছে সাব-রেজিষ্ট্রার।

এ বিষয়ে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সুমন ও আবদুস সালাম ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে সাংবাদিকদের কোন তথ্য না দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে তার স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ও সাংবাদিকদের হাতে আসা ভিডিওগুলোর একটিতে দেখা যায়, শাহজাদপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাস নিজেই একজন দলিল লেখকের কাছ থেকে ১৫০০ টাকা উৎকোচ নিচ্ছেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি দলিলের উৎকোচ বাবদ আনিছ নামের এক ব্যক্তিকে প্রথমে ৩ হাজার টাকা দিলে তিনি ওই দলিল লেখককে বলেন স্যার ৩৫০০ টাকা দিতে বলেছেন। পরে দলিল লেখক টাকা না দিয়ে সাব-রেজিষ্ট্রারকে ফোন দিতে বলেন। আনিছ সঙ্গে সঙ্গে সাব-রেজিষ্ট্রার সুব্রত কুমার দাসকে ফোন দিয়ে কথা বলেন। এরপর ৩ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে বলেন ৩৫০০ টাকার কমে হবে না। বাধ্য হয়ে ওই দলিল লেখক তাকে ৩৫০০ টাকাই প্রদান করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাস জানান, আমি বা আমার অফিসে কোন প্রকার ঘুষ নেয়া হয় না। আপনারা যা শুনেছেন তা সঠিক নয়। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ড ছড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রার আবুল কালাম মো. মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদ বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারের বিষয়ে আমি শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *