অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য- বরিশালের আগৈলঝাড়ায় প্রায় ১৫ একর জমির ৬শ’ থেকে ৭শ’ মন আমন ধান গেছে ইদুঁরের পেটে। এ ঘটনায় কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের কৃষকরা চলতি বোড়ো মৌসুমে বেসরকারী এনজিও কারিতাসের সহযোগিতায় সুফল-২ প্রকল্পের আওতায় লাল পাইকা জাতের ধানের বীজ প্রায় ১৭ একর জমিতে রোপন করেন। ওই গ্রামের কৃষক দীপংকর বাড়ৈ বলেন, আমি শ্রাবণ মাসের মধ্যবর্তী সময়ে ৮০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপন করি। প্রতিকূল আবহওয়ার মধ্যেও ফলন বেশ ভালো হয়েছিল। আমি ৩৫-৪০ মণ ধান পাবো বলে আশাবাদী ছিলাম। আমার পাশাপাশি আরও ৪০-৪৫ জন কৃষক চাষাবাদ করি। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে জমির সম্পূর্ণ ধান ইদুঁরে কেটে ফেলার কারণে একমুঠো ধান ঘরে তুলতে পারিনি। ইদুঁরে ধান কাটা শুরু করলে আমরা সব কৃষকরা ইদুঁরের হাত থেকে আমাদের ধান রক্ষা করার জন্য জমিতে থাকা ইদুঁরের আবাসস্থল ভেঙ্গে ফেলে ইদুঁর মারার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেও ইদুঁরের আক্রমণ থেকে ধান রক্ষা করতে পারিনি। আমার মত কৃষক প্রফুল্ল বেপারী ৮০ শতাংশ, বিজয়া বেপারী ৬০ শতাংশ, রাজ্যেশ্বর হালদার ৬০ শতাংশ, রাখাল রায় ৪০ শতাংশ, শিখা বেপারী ৩০ শতাংশ, সুরেশ বেপারী ৬০ শতাংশ, শীতল রায় ২০ শতাংশ, আলমগীর ভূইঁয়া ২ একর, সুকু হালদার ৭০ শতাংশ, ওহাব আলী ফকির ১ একর ৪৬ শতাংশ, শংকর রায় ১ একর, সুনীল বেপারী ৪০ শতাংশসহ প্রায় ৪০-৪৫ জন কৃষকের ১৫ একর জমির সম্পূর্ণ ৬শ’ থেকে ৭শ’ মন ধান ইদুঁরের পেটে চলে যায়। এদের মধ্যে কৃষক রাজ্যশ্বর ও কৃষক সুরেশ বেপারী হতদরিদ্রতার কারণে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ও ধার-দেনা করে ধান চাষ করেছিল। একমুঠো ধান ঘরে তুলতে না পারায় তাদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা।
কৃষক শংকর রায় জানান, আমি ১ একর জমিতে ধান বীজ রোপন করি। ফলন বেশ ভালো হওয়ায় আমার আশা ছিল জমি থেকে প্রাপ্ত ধান বিক্রি করে সেই টাকা আমার মুদী দোকানে খাটাবো। কিন্তু ইদুঁরে কারণে আমার সমস্ত স্বপ্ন ভেস্থে গেল।
কৃষাণী বিজয়া বেপারী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে এই জমি চাষাবাদ করে জীবনযাপন করে আসছি। এখন আমি ও আমার ৩ মেয়ে কি খেয়ে আগামী দিনগুলো কাটাবো সেই দুশ্চিন্তায় পরেছি। ইদুঁর আমার আশায় গুড়ে বালি দেয়ার কারণে আমি একমুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারিনি।
বৃদ্ধ কৃষক প্রফুল্ল বেপারী বলেন, আমি এনজিও থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে আমার ৮০ শতাংশ জমি চাষ করি। আশাছিল প্রায় ৪০ মণ ধান ঘরে তুলব কিন্তু ইদুঁরের কারণে আমাকে আর কাঁচি নিয়ে খেতে যেতে হয়নি।
এ ব্যাপারে বেসরকারী এনজিও কারিতাসের কৃষি প্রযুক্তি কর্মকর্তা নোবেল বিশ্বাস বলেন, আমাদের এনজিও সহযোগিতায় নওপাড়া কৃষকদের মাঝে বীজ ও কীটনাশক দিয়ে ধান চাষ করা হয়েছিল। ফলন ভালো সত্বেও ইদুঁরে ধান কাটার সংবাদ জানতে পেরে আমি উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার দোলন চন্দ্র রায়ের পরামর্শে কৃষকদেরকে ইদুঁর নিধনসহ এর প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেই। কিন্তু তাতেও ইদুঁরের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে পারেনি কৃষকরা।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ইদুঁর খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে। বছরে এক জোড়া ইদুঁর তিন হাজার বাচ্চা দেয়। একটি ধানের ব্লকে কারো একার পক্ষে ইদুঁর নিধন সম্ভব নয়। সমস্ত কৃষকদের এক সাথে একই দিনে ইদুঁর নিধন করার ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হয়। তবেই ইদুঁর নিধন সম্ভব। বাকাল নওপাড়া ব্লকের কৃষকদের ধান ইদুঁরে ক্ষতি করেছে আমি বিষয়টি অনেক দেরীতে জানতে পেরেছি।