ঢাকা: নীল-কালো-হলুদ রঙের ট্যাক্সিক্যাব ছুটে চলার দৃশ্য এক সময় ঢাকার রাস্তার নিয়মিতই ছিল।। নীল ও কালোগুলো নেই। অল্প কিছু হলুদ ক্যাব এখনো আছে। তবে ট্যাক্সিক্যাব চালক ও মালিকপক্ষ বলছে, অ্যাপভিত্তিক সেবা আসায় ট্যাক্সির চাহিদা আরও কমেছে।
সরকার ১৯৯৮ সালে ট্যাক্সিক্যাব সেবা চালু করে। সে সময়ে বিআরটিএর হিসেব অনুযায়ী ঢাকায় ১১ হাজার ২৬০টি ট্যাক্সিক্যাব নিবন্ধিত ছিল। তবে বিআরটিএ সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকায় দুই কোম্পানির প্রায় ৪০০ ট্যাক্সিক্যাব চলে।
গতকাল রোববার কাকরাইল মোড়ে দেখা যায়, তমা গ্রুপের চারটি ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। চায়ের দোকানে চালকেরা আড্ডা দিচ্ছিলেন। ট্যাক্সিক্যাবের বর্তমান অবস্থা নিয়ে মেহেদী হাসান নামের এক চালক বলেন, ‘মোটামুটি চলে। কিন্তু চাহিদা আগের চেয়ে কমেছে।’ কথা বলতে বলতেই তাঁর কাছে ফোন এল একটি ট্রিপের জন্য। তমার শুরু থেকেই থাকা এই চালক বললেন, ফোন কলের মাধ্যমেই বেশির ভাগ যাত্রী পেয়ে থাকেন। পূর্ব পরিচিত যাত্রীরা তাঁদের ফোন করেন। আরও কয়েকজন চালক একই কথা বললেন।
মো. সোহাগ নামের আরেকজন চালক আরও হতাশা প্রকাশ করলেন। তিনি বলেন, ‘অবস্থা ভালো না। আগে ৭ থেকে ১০টা ট্রিপ ছিল দিনে। কিন্তু এখন ৪-৫টার বেশি হয় না।’ বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপভিত্তিক সেবা চালু হওয়ায় তাঁদের যাত্রী কমে গেছে বলে মনে করছেন। ঝড়-বৃষ্টি হলে যেসব যাত্রী ফোন করে বাসা বা অফিসের সামনে যেতে বলতেন তাঁরা এখন ট্যাক্সিক্যাব না ডেকে উবার বা অন্য কোনো সেবা নিচ্ছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে এই চালক বলেন, হলুদ রং হওয়ায় সহজেই বোঝা যায়, এটি ট্যাক্সি। কিন্তু অ্যাপের গাড়ি বোঝার উপায় নেই। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের হয়রানির শিকার তাঁরা বেশি হন। তিনি আরও বলেন, অ্যাপভিত্তিক সেবার কারণে রাস্তায় যানজট বেড়েছে। যে গাড়িগুলো আগে পার্কিংয়ে থাকত সেগুলো অফিস সময়ে বাদে বাকি সময়ে রাস্তায় থাকে।
বেসরকারি একটি সংগঠনের কর্মকর্তা তারেক আহমেদ মাঝে মাঝে ট্যাক্সিক্যাব ব্যবহার করেন। তবে অ্যাপভিত্তিক সেবা আসার পর তিনি কমিয়ে দিয়েছেন। তারেক বলেন, ‘মধ্যবিত্তদের জন্য ট্যাক্সি বেশি খরুচে। অ্যাপের গাড়িগুলোতে নানান ছাড় থাকায় খরচ কিছুটা কম হয়। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে পরিবহন ব্যবস্থা খুবই খারাপ। আয়ের বড় একটা অংশ চলে যায় রাস্তায়।’
চারদিকে অ্যাপভিত্তিক সেবার চাহিদা বাড়ায় ট্যাক্সিক্যাব চালকেরাও মনে করছেন, ট্যাক্সির জন্য অ্যাপ হলে তাঁরাও সুবিধা পাবেন। তমা গ্রুপের ট্রান্সপোর্ট অপারেটিং কর্মকর্তা সাজ্জাদ ফারুক বলেন, বিআরটিএকে তাঁরা প্রস্তাব দিয়েছেন অ্যাপের আওতায় আসতে। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। এ ছাড়া অ্যাপে চলা গাড়িগুলোতে ট্যাক্সির মতো নির্দেশকের ব্যবস্থা রাখার জন্যও প্রস্তাব করেছেন। তিনি জানান, ঢাকায় এখন তমা গ্রুপের ২০০টি এবং ট্রাস্টের ১৭৫টি ট্যাক্সিক্যাব চলছে। ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া প্রথম ২ কিলোমিটার ৮৫ টাকা এবং এরপরে প্রতি কিলোমিটারে ৩৪ টাকা। আর যাত্রাবিরতির (যানজট ও সিগন্যাল) জন্য প্রতি দুই মিনিটে আট টাকা। ট্যাক্সিক্যাব বেশি খরুচে কিনা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, গাড়ির মান ও সেবা অনুযায়ী ভাড়া ঠিকই আছে।
বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস ট্যাক্সি সেবা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, গাড়িগুলোর মান ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে কমে গেছে। অ্যাপের গাড়িতে নির্দেশক লাগানোর ব্যাপারে বলেন, এ গাড়িগুলো ট্যাক্সির মতো সর্বক্ষণ চলে না। তাই নির্দেশক লাগানোর দরকার নেই।