পুলিশের জরুরি সেবা সার্ভিস নম্বরে ফোন দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেবা নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিকাণ্ড ও বাল্যবিবাহের মতো ঘটনায় ফোন দিয়ে সেবা নিয়েছেন অনেকে।
তবে অনেকেই আবার সেবা নেওয়ার বদলে ফোন দিয়ে পুলিশের কর্তব্যরত নারী সদস্যদের জ্বালাতন করছেন। মোট ফোনের ১৫ শতাংশের ক্ষেত্রেই এমনটা হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যারা এভাবে বিরক্তির কারণ হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পুলিশি সেবা দিতে ১২ ডিসেম্বর থেকে জরুরি সেবা সার্ভিস নম্বর ৯৯৯ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এ জন্য গ্রাহকের কোনো রকম খরচ লাগবে না। কোনো অপরাধ ঘটতে দেখলে, প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দিলে, কোনো হতাহতের ঘটনা চোখে পড়লে, দুর্ঘটনায় পড়লে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে, জরুরিভাবে অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাওয়া যাবে। মোবাইল ফোন ও টেলিফোন উভয় মাধ্যমে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা যাবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নির্দেশনা ও কন্ট্রোল সেন্টার ভবনে এই সেবার কার্যক্রম চলছে। তিনটি পালায় পুলিশের মোট ১২৮ জন সদস্য এই কাজ করছেন। খুব শিগগির জনবল দ্বিগুণ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। গতকাল শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত এখান থেকে সেবা নিয়েছেন ৩৩২ জন।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উদ্বোধনের পর থেকে গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত ১ লাখ ৫ হাজার ১৮৭টি ফোন এসেছে। এর মধ্যে ৫৯ হাজার ৬৪৭টি ফোনেই অপর প্রান্ত থেকে কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। শিশুরা ৫৬২টি ফোন করেছে। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব চেয়ে ফোন এসেছে ১৪ হাজার ৯৩৩টি। কর্তব্যরত নারী পুলিশ সদস্যদের বিরক্ত করার ফোনের সংখ্যা ১৬ হাজার ৩৬৪টি। ১১ হাজার ৭৯০টি মিসড কল। নিজেদের বিভিন্ন অভিযোগ এবং সমস্যার সমাধান চেয়ে ফোন করেছেন এমন নারীর সংখ্য ১৫২ জন। বাকি ফোনগুলোর মধ্যে কিছু ফোন এসেছে পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকেই। আর কিছু ফোনকে কোনো শ্রেণি বিভাগের মধ্যে ফেলা হয়নি।
এদিকে সেবা পেয়েছেন এমন নাগরিকের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। গতকাল রাতে ৯৯৯-এ কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার মো. মিরাজুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, ৩৩২ জন সেবা পাওয়া ব্যক্তির মধ্যে আগুন-সংক্রান্ত ছিল ৯৭টি, দুর্ঘটনা ৫৩টি এবং জুয়া, প্রতারণা, সাইবার অপরাধ, মৃত্যুসংবাদ, অপহরণ—এসব পুলিশি সমস্যা নিয়ে ফোন করেছেন বাকি ১৮২ জন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্দেশনা ও কন্ট্রোল সেন্টার ভবনে গেলে পুলিশ পরিদর্শক মো. জালিস মাহমুদ কল সেন্টারটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি জানান, মোট তিন ভাগে ভাগ হয়ে পুলিশ সদস্যরা এখানে কাজ করছেন। একটি অংশ ফোন এলে তা গ্রহণ করছেন এবং অভিযোগ শুনছেন। প্রাথমিক তথ্য দিয়ে এর সমাধান হলে তাঁরাই সেই তথ্য দিয়ে দিচ্ছেন। সমস্যাটি গুরুতর হলে তাঁরা সংশ্লিষ্ট থানাকে বিষয়টি জানাচ্ছেন। অভিযোগটির পরবর্তী তত্ত্বাবধান তখন করছেন আরেকজন পুলিশ সদস্য। সহায়তা চেয়ে যোগাযোগকারীর সমাধান নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি ওই ব্যক্তি, থানা-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
কল সেন্টারটি উদ্বোধনের পর সহায়তা চেয়ে প্রথম কলটি এসেছিল গাজীপুরের শিবগঞ্জ থেকে। একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা চাওয়া হয়। কল সেন্টার থেকে সংশ্লিষ্ট ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আধা ঘণ্টার মধ্যেই আগুন নেভানো হয়। এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনা এবং সংখ্যালঘুদের দোকান ভাঙচুরের ঘটনার সমাধান হয়েছে এই সার্ভিস সেন্টার থেকে।
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, বুধবার রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ নিশ্চিন্তপুর গ্রামে একটি বাল্যবিবাহের আয়োজন চলছিল। খাওয়ার পর ওই কিশোরীর হাতে মেহেদি লাগানো হচ্ছিল। এমন সময় সেখানে হাজির হয় পুলিশ। ‘৯৯৯’-এ ফোন কল পেয়ে বিয়ের আয়োজন বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পায় ১৩ বছরের কিশোরী। বৃহস্পতিবার তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার রাতে এক শারীরিক ও বাক্প্রতিবন্ধী তরুণীকে (৩০) ধর্ষণের অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্থানীয় একজন ‘৯৯৯’-এ ফোন করে ঘটনাটি জানান। পরে গাজীপুর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই তরুণীকে উদ্ধার এবং আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনাটি ঘটে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায়।
কল সেন্টারে কর্তব্যরত পুলিশ সুপার (এসপি) তবারক উল্লাহ বলেন, কল সেন্টারে বর্তমানে প্রতি পালায় ৩৩ জন কর্মী কাজ করেন। এর মধ্যে কল টেকার ২৬ জন। এই সংখ্যা শিগগিরই ১০০ জনে উন্নীত করা হবে। বিরক্তিকর ফোনের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা বিরক্তিকর কল দেয়, তাদের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। প্রথমে তাদের বুঝিয়ে বলা হয়, এরপরও না শুনলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের নম্বর ব্লক করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, যারা নিয়মিত বিরক্ত করে, এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।