বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সাদ ইশতিয়াক ও রাশিক রহমানের (ছদ্মনাম) সম্পর্কের ব্যাপারটাই ধরুন। চার-পাঁচ বছরের সহকর্মী তাঁরা। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ভালো বন্ধুত্বও হয় দুজনের। কিন্তু সে সম্পর্কও হঠাৎ চিড় ধরে। মনোমালিন্য এমনই রূপ নেয়, একজন অপরজনকে এড়িয়ে চলা শুরু করেন। যেন ধাক্কা লাগলেও কথা বলবেন না। বাস্তবতাও তা-ই, কেউ কারও সঙ্গে কথা বলেন না।
কিন্তু অফিস তো ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা জানে না। হঠাৎ তাঁদের দুজনের কাঁধে একই কাজের দায়িত্ব বর্তায়। দুজনই বেশ বিপত্তিতে পড়েন। এখন তাঁরা কী করবেন? পেশার ক্ষেত্রে এই ব্যক্তিগত সম্পর্ক কতটুকু প্রভাব ফেলে? কিংবা কতটা ফেলা উচিত?
সাদ ও রাশিকের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল বলেন, ‘এমন অবস্থায় অবশ্যই সম্পর্কের ব্যক্তিগত দিকটার চেয়ে পেশাগত দিকটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। দুজনের চেষ্টা করতে হবে পেশাগত উৎকর্ষ সাধনে যতটা শ্রম দেওয়া উচিত, ততটা শ্রম দিতে হবে। এটাই পুরোদস্তুর পেশাজীবীদের বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।’
সাদ ও রাশিক সে কাজটিই করেছিলেন। তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কটা শেষ হয়ে গেলেও, পেশাগত সম্পর্কটা তখনো ছিল। তাই সবকিছু চেপে দুজনে বসে পরিকল্পনা করেছেন, কাজটাকে সফল করেছেন।
পেশাগত সম্পর্ক তো পেশার খাতিরেই সামাল দিতে হয়। কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে? এমনও হয়, বিয়ের মতো কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে এমন একজনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, যার সঙ্গে অতীতে সমস্যা ছিল। তখন আমরা কী করব? তার সঙ্গে সামাজিকতার খাতিরে কথা বলব? কিংবা তার সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কথা বলতেই যাব কেন? আহমেদ হেলাল বললেন, ‘সামাজিক অনুষ্ঠানে অবশ্যই আপনাকে সামাজিক আচরণ করতে হবে। ব্যক্তিগত খারাপ সম্পর্কের জের ধরেও কারও সঙ্গে এমন কোনো কাজ করা যাবে না যা কি না সামাজিকতার পরিপন্থী।’
রোজই অনেক মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সম্পর্কেরও থাকে রকমফের। সেই সম্পর্কের একটা দিক আরেকটা দিকের ওপর যখন বেশি প্রভাব ফেলে তখনই দেখা যায় সমস্যা। কেবল এই ব্যাপারটা সামলে চলতে পারলেই কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলো অনেক স্বস্তিদায়ক হতে পারে।