যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুজালেম সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে গতকালও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। লেবাননের মার্কিন দূতাবাস ঘিরে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ থামাতে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিকে আরব লীগ যুক্তরাষ্ট্রের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা মার্কিন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে ঘোষণারও আহ্বান জানায়। এখন আর কোনোভাবেই মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করা যায় না বলে মন্তব্য করেন আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
আরব দেশগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ২২টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দাবি করেন, মার্কিন সিদ্ধান্তের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শুধু সহিংসতাই বাড়বে। কায়রোতে গতকাল ভোররাতে শেষ হওয়া এক জরুরি বৈঠকের পর আরব লীগের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত বুধবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা ‘আন্তর্জাতিক আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন। ’ এর কোনো আইনি তাৎপর্য নেই এবং এটি ‘অকার্যকর’। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় বৈঠকটি শুরু হয়।
ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চায়।
ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই জেরুজালেমের মর্যাদা নির্ধারিত হতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে এটাই যুক্তরাষ্ট্রের অনুসৃত নীতি ছিল। অন্যদিকে পুরো জেরুজালেমকেই নিজেদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছিল ইসরায়েল। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতি বিসর্জন দিয়ে ইসরায়েলের ওই দাবিকেই স্বীকৃতি দিয়েছেন। বৈঠকে লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিব্রান ব্যাসিল, মার্কিন দূতাবাস ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে হস্তান্তর ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনার জন্য আরব দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে বাহরাইনে মানামা ডায়ালগ ইভেন্ট নামে এক বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলনে সৌদি প্রিন্স তুরকি আল ফয়সাল বলছেন, এ ঘোষণা জঙ্গি গ্রুপগুলোর জন্য অক্সিজেনের মতো কাজ করবে এবং তা মোকাবেলা করা কঠিন হবে। প্রিন্স তুরকি আল ফয়সাল গত ২০ বছর ধরে সৌদি আরবের গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
লেবাননে বিক্ষোভ
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের উত্তরে মার্কিন দূতাবাসের কাছে বিক্ষোভ চলাকালে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। প্রতিবাদকারীরা বৈরুতের উত্তরে আওকার জেলায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কাছে অবস্থান নিয়ে দূতাবাসের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে এবং রাস্তায় আগুন জ্বালায়। প্রতিবাদকারীদের বাধা দিতে দূতাবাসমুখী প্রধান সড়কে ব্যারিকেড বসিয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনী। এ ছাড়া মিসর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও মরক্কোতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। সব বিক্ষোভ থেকেই আহত ও আটক হওয়ার ঘটনার খরব পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিত তীর থেকেও ইসরায়েলি সেনাদের রাবার বুলেট হামলায় কয়েক জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
হামাসের সুড়ঙ্গ ধ্বংস
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজা থেকে তাদের ভূখণ্ডে আসা একটা সুড়ঙ্গ গতকাল ধ্বংস করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস বলেছেন, গোয়েন্দা বার্তা জানিয়েছে সুড়ঙ্গটি হামাস তৈরি করেছে এবং গাজা থেকে এসেছে। ধ্বংসপ্রক্রিয়ায় কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে, সে ব্যাপারে ইসরায়েল উদ্বিগ্ন নয়। ইসরায়েল সাম্প্রতিক সময়ে এটা নিয়ে দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ ধ্বংস করল। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর হামাসের একটি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে দিয়েছিল। সূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।