কমিকে নারী সুপারহিরো

Slider বিনোদন ও মিডিয়া

940af58bb3f986faf65b2d2a3f003d35-5a2b5b95ad483

 

 

 

 

সাংবাদিকতা পেশায় তার পরিচয় শবনম শরিফ নামে। তবে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়লে এই শবনম পরিণত হয় ‘মিস সাবাশ’-এ। নিজের অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে সে মোকাবিলা করে অশুভ শক্তির। এভাবেই সে পরাজিত করে রং ফরসাকারী ক্রিম তৈরির কোম্পানির সিইওকে, যে কিনা জোর করে সবার গায়ের রং ফরসা বানাতে চায়।
এটি দেশি কমিক হিরো মিস সাবাশকে নিয়ে লেখা একটি গল্প। প্রেক্ষাপট দেশি হলেও এই কমিকস লেখা হচ্ছে ইংরেজি ভাষায়। মিস সাবাশ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম নারী কমিক সুপারহিরো।

এ দেশে বাংলা কমিকস নিয়ে কাজ হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। বর্তমানে ধারাবাহিকভাবে মৌলিক বাংলা কমিকস তৈরি ও প্রকাশিত হচ্ছে। এখন ইংরেজি ভাষায় মৌলিক কমিকস লেখা ও প্রকাশের কাজও হচ্ছে। এসব কমিকসের বেশির ভাগের কাহিনি ও মূল চরিত্রগুলো দেশীয়।

কিন্তু বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষায় কমিকস তৈরির কারণ কী? এই প্রশ্ন করতেই মাইটি পাঞ্চ স্টুডিও নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সামির আসরান রহমান বলেন, এ দেশের কমিকসকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, ‘আমি এমন কমিকস তৈরি করতে চাই, যা নির্দিষ্ট সংস্কৃতির সীমা ছাড়িয়ে সর্বজনীন হয়ে উঠবে। বাইরের দেশে নিয়ে যেতে হলে ইংরেজি ভাষায় লেখা ছাড়া উপায় নেই।’ তিনি বলেন, তাঁর বেশির ভাগ কাহিনিই নেওয়া হয়েছে দৈনন্দিন নানা ঘটনা থেকে।

দেশীয় চরিত্রের ইংরেজি কমিকস বইয়ের মধ্যে ‘সাবাশ’, ‘মিস সাবাশ’, ‘ক্যাপ্টেন কাঁঠাল’ ও ‘লাঠিয়াল’ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ছাড়া ভিনগ্রহের কাহিনি নিয়ে তৈরি ‘জোয়ি’র চাহিদা হয়েছে।

‘সাবাশ’ সিরিজের প্রথম বইটির কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ঢাকা কমিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক মেহেদি হক। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দেশি কমিকস নিতে হলে ইংরেজি ভাষাতেই করতে হবে।

ইংরেজি ভাষায় করা বাংলাদেশি কমিকস নিয়ে বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া কমিকস-বিষয়ক বিখ্যাত ওয়েবসাইট কমিকসভার্সে ‘মিস সাবাশ’ নিয়ে পর্যালোচনা প্রকাশিত হয়েছে।

21802e9413fe5967640926b5704928d2-5a2b5ccddfa46

 

 

 

 

বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো কার্টুন পত্রিকা ‘উন্মাদ’-এর সম্পাদক কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা প্রজন্ম আছে, যারা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। তারা বাংলা খুব একটা পড়েই না। তাদের যদি এই ইংরেজি কমিকসের মাধ্যমে দেশ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া যায়, মন্দ কী? তা ছাড়া ইংরেজি এখন আর শুধু একটা ভাষা নয়; এটি টেকনোলজির একটা অংশ হয়ে গেছে। আর এখন তো অনলাইনের কারণে সবকিছুই বৈশ্বিক বাজারের দৃষ্টিকোণেই দেখা উচিত।’

নারী কমিক হিরো
‘মিস সাবাশ’ ও ‘লাঠিয়াল’ কমিকসের মূল চরিত্র একজন নারী। সাংবাদিকের ছদ্মাবরণে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে মিস সাবাশ, যাকে গল্পে দেখানো হয়েছে একজন আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল নারী হিসেবে। আর বাংলার ঐতিহ্যবাহী রূপকথার গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে ‘লাঠিয়াল’-এর গল্প। এই কমিক বইয়ে একজন মেয়ে হাতে তুলে নেয় লাঠি এবং যোদ্ধা হয়ে লড়ে সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

তবে শুধু নারী সুপারহিরো চরিত্রই নয়, একই সঙ্গে নারী খলনায়িকা চরিত্রও আছে। ‘মিস সাবাশ’ সিরিজের খলনায়িকা চরিত্রের নাম ‘মিস পোরশা’।

শক্তিশালী ও আত্মনির্ভরশীল নারী কমিক চরিত্র তৈরি প্রসঙ্গে সামির বলেন, ‘বাস্তব জীবনে আমার চারপাশে অনেক আত্মবিশ্বাসী নারী আছেন। আমার মা, স্ত্রী, বন্ধুরা—এঁদের কাছ থেকেই আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। তা ছাড়া ব্যাটম্যান, সুপারম্যান—এরা সবই তো পুরুষ সুপারহিরো। আমি এ জায়গায় একটি পরিবর্তন আনতে চেয়েছি।’

কিছু মেয়ে কার্টুনিস্টও এখন নারী সুপারহিরো নিয়ে কাজ করছেন জানিয়ে কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব বলেন, ‘আমাদের দেশে দুজন ছেলে এভারেস্ট জয় করেছে। দুজন মেয়েও এভারেস্ট জয় করেছে। কাজেই ছেলেমেয়ে এখন সমান-সমান। এখন দেশীয় প্রেক্ষাপটে ছেলে সুপারহিরো থাকলে অবশ্যই মেয়ে সুপারহিরো থাকতেই পারে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *