জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বলছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের রাখাইনে নিরাপদে ফেরানোর মতো উপযুক্ত পরিবেশ নেই। এখনো সেখান থেকে লোকজন পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে। তাই সময় হওয়ার আগে রোহিঙ্গাদের যাতে ফেরত পাঠানো না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক উপহাইকমিশনার ক্যালি ক্লিমেন্টস গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। একই বিষয়ে মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে আগামী সপ্তাহে তাঁর সহকর্মী নেপিডো যাবেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার আঞ্চলিক প্রতিনিধি জেমস লিঞ্চ এই প্রতিবেদককে জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে তিনি মিয়ানমারে যাচ্ছেন। তিনি রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত রাখাইনের সহিংসতাকবলিত এলাকায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এখনো তাঁকে রাখাইন সফরের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
রোহিঙ্গাদের এখন রাখাইনে ফেরত পাঠানোর পরিবেশ নেই উল্লেখ করে ক্যালি ক্লিমেন্টস বলেন, তাদের বেশির ভাগেরই ঘরবাড়ি ও গ্রাম ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সেখানকার সম্প্রদায়গুলোর মাঝে যে গভীর বিভাজন রয়েছে, তার সুরাহা হয়নি এবং জরুরি ত্রাণসহায়তাও যথেষ্ট নয়। তাই সময় হওয়ার আগে যাতে প্রত্যাবাসন না হয়, এটা জরুরি।
ক্যালি ক্লিমেন্টস জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য যে রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার, তা নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে দুই দেশের সরকারের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে তাঁদের আলোচনা হবে। বিশেষ করে চুক্তি অনুযায়ী ইউএনএইচসিআরের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হবে।
রোহিঙ্গাদের এখন রাখাইনে ফেরত পাঠানোর পরিবেশ নেই—এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন। এ নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আদৌ আলোচনা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে ক্যালি ক্লিমেন্টস বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কথা হচ্ছে।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা না রাখার পক্ষে মত দেন জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার উপহাইকমিশনার। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সময়সীমা সেভাবে কাজে আসে না। কারণ ফেরার সিদ্ধান্তটা নির্ভর করে শরণার্থীদের ওপর। তারা যদি না চায়, তাদের তো জোর করে ফেরত পাঠানো যায় না।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কতটা পাওয়া গেছে—জানতে চাইলে ক্যালি ক্লিমেন্টস জানান, জেনেভায় দাতাদের সম্মেলনে ৪৩৫ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এর ৩৫ শতাংশ এর মধ্যে পাওয়া গেছে।
নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা মঙ্গলবার
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জেফরি ফেল্টম্যান ১২ নভেম্বর নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করবেন।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে গত ৬ নভেম্বর নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির বিবৃতি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, এক মাস পর আবার নিরাপত্তা পরিষদকে এ বিষয়ে অবহিত করবেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
এর আগে আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত অন্তত চারবার নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে এবং এর মধ্যে একটি হয়েছে উন্মুক্ত আলোচনা; যেখানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।