জনপ্রশাসনে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা তুলনামূলক বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন বলে অভিযোগ আছে। একসময় প্রকৃচি (প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক) সমিতি নামে একটি সংগঠন অতীতে সম–অধিকারের দাবিতে আন্দোলনও করেছে। প্রশাসনে শীর্ষ বা সচিব পদে আসীন ব্যক্তিদের ৯০ শতাংশ আসেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ থাকা অস্বাভাবিক নয়। গেল জাতীয় বেতন বোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণার সময়ও প্রশাসনবহির্ভূত ২৭ ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারের কাছে কিছু দাবিদাওয়া তুলে ধরেছিলেন। বিভিন্ন স্তরে পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে।
নতুন করে বৈষম্যের বিষয়টি সামনে এসেছে প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের গাড়িঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে। যুগ্ম সচিব ও এর ওপরের সরকারি কর্মকর্তারা আগে প্রাধিকারপ্রাপ্ত বলে গণ্য হতেন। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী উপসচিবেরাও যুক্ত হলেন এবং তাঁরা সরকারি খরচে গাড়ি না পেলেও গাড়ি কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ির চালক ও জ্বালানি খরচ বাবদ মাসে ৫০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী স্বীকৃত উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা ৩০ লাখ টাকা করে গাড়ি কেনার ঋণ নেওয়া শুরু করেছেন, যাঁদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাই বেশি। অন্যদিকে ইকোনমিক ক্যাডারের সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের একটি আবেদন অর্থমন্ত্রী নাকচ করে দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উপসচিব পদমর্যাদায় আসীন কর্মকর্তার সংখ্যা ১ হাজার ৫৩৯, যাঁদের ঋণ দিতে প্রয়োজন হবে ৪৬২ কোটি টাকা। আর এ বছর সরকার দিয়েছে ৩০ কোটি টাকা। সে ক্ষেত্রে অন্যদের গাড়িঋণ পেতে অনেক বছর লেগে যাবে। ফলে একই পদমর্যাদায় চাকরি করেও যাঁরা গাড়িঋণ পাবেন আর যাঁরা পাবেন না, তাঁদের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বিরাট বৈষম্য দেখা দেবে। এতে প্রশাসনে গতি আনবে না; বরং অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
গত ২৫ আগস্ট ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম ও গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালা ২০১৭ (সংশোধিত)’ নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঋণ মঞ্জুরির আদেশ জারির পর থেকে অন্তত এক বছর ওই কর্মকর্তার চাকরি থাকতে হবে। এরপর কেউ চাকরি ছেড়ে দিলে তাঁর কাছ থেকে ঋণ আদায় সহজ হবে না। জনপ্রশাসনে গতি ও কর্মস্পৃহা বাড়াতে হলে তেলা মাথায় তেল দেওয়ার নীতি পরিহার করে সবাইকে সমদৃষ্টিতে দেখতে হবে।