টাকার অভাবে স্বপ্ন ফিকে

Slider বিচিত্র

037045061b429c65565441f7667375ca-5a241a73812f3

 

 

 

 

হামিদা খাতুনের বাবা বর্গাচাষি ছিলেন। এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার দুদিন আগে মারা যান তিনি। শোক আর প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও ভর্তি হওয়ার টাকা নেই তাঁর। অন্যদিকে আবদুস সালামেরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন ফিকে হচ্ছে। নির্মাণশ্রমিক বাবার এই সন্তান পড়াশোনার খরচ জোগাতে একসময় দিনমজুরের কাজও করেছেন।

এই দুই মেধাবীরই বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায়। হামিদার (১৮) বাড়ি উপজেলার আরাজি দিলালপুর এবং আবদুস সালাম (১৮) থাকেন রাধানগর মণ্ডলপাড়া গ্রামে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে দুজনই এখন সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের দিকে তাকিয়ে আছেন।

সাত ভাইবোনের মধ্যে হামিদা ষষ্ঠ। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দুদিন আগে মারা যান তাঁর বাবা হবিবর রহমান। পরীক্ষাও খুব একটা ভালো দিতে পারেননি। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও এইচএসসিতে পান জিপিএ-৪.৬৭। বাবার মৃত্যুর পর নয়জনের সংসারের খরচ চালানোই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের ও বড় বোনের টিউশনির টাকায় এত দিন পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন হামিদা।

হামিদা এবারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘ঘ’ ইউনিটে মেধাতালিকায় ২৪০তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঘ’ ইউনিটে ১৯তম, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটে ১৯তম ও ‘জি’ ইউনিটে ষষ্ঠ হয়েছেন। তবে তিনি ভর্তি হতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাগবে বলে শুনেছেন তিনি। কিন্তু ভর্তির এতগুলো টাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ জোগানো তাঁর পক্ষে অসম্ভব।

অন্যদিকে আবদুস সালামের বাবা মোকছেদ আলী একজন নির্মাণশ্রমিক। বয়সের ভারে তিনি এখন তেমন কাজও করতে পারেন না। মা শামসুন্নাহার বেগম দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে অসুস্থ। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সালাম দ্বিতীয়। তিনি ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ইউনিটে। এর মধ্যে ‘ই’ ইউনিটে মেধাতালিকায় ১২২তম ও ‘এ’ ইউনিটে ৮৪৭তম হয়েছেন। টাকার অভাবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাই দিতে পারেননি সালাম।

সালাম বদরগঞ্জ উপজেলার পাঠানপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ-৪.৮৯ এবং বদরগঞ্জ লালদীঘি পীরপাল ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিকে জিপিএ-৪.৫৮ পেয়েছেন। সালাম মা-বাবা ও চার ভাইবোনকে নিয়ে থাকেন মাটির ঘরে। বসতভিটা ছাড়া আর কিছু নেই তাঁদের।

দিনমজুরি ও টিউশনি করিয়ে এ পর্যন্ত পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন দিনমজুরি করে যে টাকা জমিয়েছিলাম, তা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ইউনিটে ভর্তির মৌখিক পরীক্ষা দিতে যাওয়া-আসা করতেই শেষ হয়েছে। চলতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যেই ভর্তি হতে হবে। শুনেছি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ১০ হাজার টাকা লাগবে। তাই ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর থেকে টাকা জোগাড় করতে এলাকায় দিনমজুরির কাজ করছি। কিন্তু টাকা জোগাড় করতে পারছি না।’

সালামের বাবা মোকছেদ আলী বলেন, ‘শুনছি, বেটা আজশাহীত (রাজশাহী) চাস (চান্স) পাইচে। মোর তো ভাত খাওয়ারে টাকা নাই। অয় ভর্তি হইবে কি দিয়া? অক কনু টাকা নাই। মাইনসের বাড়িত কাম করিয়া টাকা জমে নাকি ভর্তি হইবে।’

হামিদা খাতুনকে সহায়তা করার উপায়: ০১৭৮৭৯২৫৪৩২ (বিকাশ নম্বর)
আবদুস সালামকে সহায়তা করার উপায়: ০১৭৩৮০৬৫৪৬১-৪ (ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল অ্যাকাউন্ট)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *