খেলার মাঠের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অনেক বাচ্চা বুঁদ হয়ে থাকছে মোবাইল বা কম্পিউটার গেমস খেলায়। ঘরোয়া খেলা দাবা যেন আজ হারাতে বসেছে। এসব চিন্তা করে ২০০৮ সালে নারায়ণগঞ্জে ‘নাহার চেস একাডেমি’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
নাহার চেস একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও কোচ মো. নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে দাবা খেলা শেখানো ও বিশ্বে বাংলাদেশের দাবাড়ুদের স্থান করে দেওয়ার মাধ্যমে খেলাটিকে জনপ্রিয় করাই এই পাঠশালার উদ্দেশ্য। জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দাবাপ্রেমী ও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী সেখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
নাজমুল হাসানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৯৯৯ সালে তিনি দাবা খেলা শেখানো শুরু করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা দাবা খেলা সমিতির উদ্যোগে খুদে দাবাড়ু তৈরির উদ্যোগের অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের বিবি মরিয়ম স্কুলে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি দাবা খেলা শেখান। একই সময় জেলার চারটি স্কুলে ওই কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৫ সালে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির সুবাদে বগুড়া চলে যান। ২০০৮ সালে তিনি ফিরে আসেন নারায়ণগঞ্জে। এরপর তিনি ফতুল্লার তল্লা এলাকায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত নাবা স্কুলের একটি কক্ষে নাহার চেস একাডেমি গড়ে তোলেন। প্রতিবছর গড়ে ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নেয় তাঁর একাডেমিতে। এদের মধ্যে স্কুলের শিক্ষার্থীই বেশি। ভর্তি ফি নেওয়া হয় ৫০০ টাকা। মাসিক বেতন ৫০০ টাকা। বিনা বেতনেও শেখে কয়েকজন। আবার ১০০ টাকা বেতন দেয় এমন শিক্ষার্থীও আছে। প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় একাডেমিতে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই জাতীয় মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য পেয়েছেন। খুদে দাবাড়ুরাও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য বয়ে আনছে।
নাজমুল হাসান জানান, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে মামা মো. খালেকুজ্জামান খান আইয়ুব ও মো. মনিরুজ্জামান খান জহুরের মাধ্যমে তাঁর দাবায় হাতেখড়ি। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আন্তস্কুল জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতা ২০১৬-তে দাবায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সেরা দাবা সংগঠকের পুরস্কার। তিনি জানান, মা নুরুন নাহার খানমের নামে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নাহার চেস একাডেমি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তিনি শৌখিন খেলোয়াড়দেরও প্রশিক্ষণ দেন। শিক্ষার্থীদের চারটি ধাপে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য তাঁর একাডেমিতে আছে কম্পিউটার ও লাইব্রেরি। আগ্রহী দরিদ্র মেধাবীদের মাসিক ১০০ টাকায় দাবা শেখান। দাবা খেলাকে জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে এই একাডেমি দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে।
নাজমুল হাসান বলেন, ‘খেলার মাঠ কমে গেছে। আমি হয়তো বাচ্চাদের খেলার মাঠ দিতে পারছি না। কিন্তু দাবার বোর্ড তো দিতে পারছি। দাবায় মনোনিবেশ করলে, সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে শিশু-কিশোররা মাদক থেকে দূরে থাকে।’