বুদ্ধিশুদ্ধি হওয়ার পর জানলাম আনিসুল হক গার্মেন্টস ব্যবসা করছেন। বিশাল ব্যবসা। মোহাম্মদী গ্রুপের কর্ণধার। কেমন যেন লাগল। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা হঠাৎ সুপার শপ দিলে যেমন অনুভূতি হবে, তেমন। তখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। একদিন দুপুরে অপরাজেয় বাংলার পাশে একটা মাইক্রোবাস এসে থামল। মিটিমিটি হেসে নামলেন আনিসুল হক। হাতে ভিডিও ক্যামেরা। এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলাম, হেসে উত্তর দিলেন। ফ্যান আর সেলিব্রিটি আর কি! কী যেন তুলবেন। যা-ই তুলুন, মনে শান্তি পেলাম—লাইনচ্যুত হননি।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে হঠাৎ ইলেকশনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিয়ে একটা টিভি প্রোগ্রাম করলেন আনিসুল হক। নাম ‘সবিনয়ে জানতে চাই’। সবার দৃষ্টি কাড়ল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেই অনুষ্ঠানে বিএনপি-আওয়ামী লীগের সব নেতাকে মিস্টার অমুক, মিস্টার তমুক বললেও জাতীয় পার্টির মিজান চৌধুরীকে আনিস ভাই ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। কারণটা অজানা। বর্ষীয়ান নেতা, সে জন্য হয়তো, হু নোজ?
আনিসুল হকের সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় লিজেন্ড অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী ভাই যখন মারা যান, তখন। শহীদ মিনারে ছোটাছুটি করছেন। আমি এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলাম, আমার মিডিয়া পরিচয় দিলাম, ফোন নম্বর চাইলাম, উনি দিলেন। এটা মেয়র হওয়ার অনেক আগের ঘটনা। একবার-ই কথা হয়েছিল ফোনে। নম্বরটা আমার কাছে এখনো আছে। গ্রামীণ নম্বর। বন্ধ। সম্ভবত মেয়র হওয়ার পর উনি তা আর ব্যবহার করেননি।
মেয়র ইলেকশনের জন্য যখন আনিসুল হক দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেন, আবারও ধাক্কা খেলাম। এবার মনে হলো, উত্তম কুমার হাতুড়ি-শাবল নিয়ে রাস্তা বানাতে নামবেন। আর মেয়র হিসেবে প্রথম ধাক্কা দিলেন তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড তুলে দিয়ে। এই ট্রাক স্ট্যান্ডের সঙ্গে আমার স্মৃতি আছে। এর পাশেই এক কলেজে আমি পড়েছি। গভর্নমেন্ট সায়েন্স কলেজ। একবার আমাদের কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে এই স্ট্যান্ডের শ্রমিকদের ভয়াবহ মারামারি হয়। দুদিন চলে। তারপর মিটমাট হয়। আমার ধারণা ছিল না, কেউ কোনো দিন এই স্ট্যান্ড উঠাতে পারবে। এরপর একদিন খবরে দেখি, উত্তরা বা বনানী এলাকায় কোনো কবরস্থান নিয়ে কী একটা ঝামেলা হয়েছে। আনিসুল হক ভাই শর্টস পরেই তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে উপস্থিত। দেখে মনে মনে হাসলাম। খারাপ লাগলে একজন আনিসুল হকের জন্য। আমি কাছে থাকলে বলতাম, আনিস ভাই, পরিবর্তন একা একা করা যায় না। এটি একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া। তড়িঘড়ি করেও পরিবর্তন আসে না। পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ। কালের পরিবর্তন তার সাক্ষী।
আমার মনে হয়েছে, পজিটিভ মাইন্ড নিয়ে আনিসুল হক ভাই তড়িঘড়িই করেছেন। আর মতাদর্শগত কারণেও হয়তো সবাইকে সমন্বিত করতে বেগ পেয়েছেন।
দেশে মতাদর্শগত বিভাজন থাকবে। এটাই গণতন্ত্রের বিউটি। সব মতাদর্শেই ভালো ও পজিটিভ মানুষ আছে। এরা সবা-ই রাষ্ট্রের সম্পদ। দলমত-নির্বিশেষে সবাই মিলে ভালো ও পজিটিভ মানুষগুলোকে সংরক্ষিত করার সময় এসেছে। দেশে নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন পজিটিভ আর ক্রিয়েটিভ মানুষগুলো একে একে চলে যাচ্ছেন। কান্ডারি হুঁশিয়ার!
আনিসুল হক ভাই, যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।
শায়ের খান: রম্য লেখক, নাট্যকার ও পরিচালক