রুবানা, তোমার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ-বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল লেখাপড়ার সূত্রে। তুমি ইংরেজি সাহিত্যের নিবিষ্ট পাঠক, সৃষ্টিশীল চিন্তার একজন সার্বক্ষণিক কর্মী। আমি বাংলা সাহিত্যের পাঠক, লেখালেখি করি। গবেষণার একটা ছোট্ট সূত্র পেলেই উৎসাহে ছটফট করি। তোমার সঙ্গে কথার সূত্রে বারবার বলতে থাকি তুমি যেন ইংরেজি সাহিত্য বিষয়ে বা তোমার প্রিয় কোনো বিষয়ে ‘পিএইচডি’ করো। তুমি নিজেও ভাবছিলে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (কলকাতায়) গবেষণা শুরু করলে। আমি ফোনে, সাক্ষাতে তোমার গবেষণার কাজটির জন্য চাপ দিতে থাকি। তুমি আনিস ভাইয়ের সহযোগিতায় এগিয়ে চললে। গবেষণা শেষ করলে।
তুমি সানন্দে দায়িত্ব নিয়েছ গার্মেন্টস কোম্পানি মোহাম্মদীয়া গ্রুপের সব কর্মী, গার্মেন্টস শ্রমজীবী পরিবারের শিশুদের। সকাল থেকে রাত অবধি সেই ব্যবসা সামলাচ্ছ, আনন্দের সঙ্গে শিশুদের লেখাপড়া, খাওয়াদাওয়া, জীবনচর্চার দায়িত্ব পালন করছ।
তোমার শিশুপুত্রটির জীবন-মরণের তীব্র বেদনায় নীল হয়ে যাওয়ার মুহূর্তেও তুমি অবিচল ছিলে। কিন্তু শিশুসন্তানকে চিরতরে নীলিমার নীল আকাশের উজ্জ্বল তারা হয়ে যেতে দেখে রুদ্ধবাক হয়ে গেলে। সেই শিশুকে খুঁজে পাচ্ছ গার্মেন্টস কর্মীদের শিশুদের মধ্যে। তুমি সব শিশুর মা হলে।
রুবানা, তোমার ব্যক্তিজীবন, কর্মজীবন, সাংস্কৃতিক-সংস্কৃতি-সাহিত্যচর্চার জীবন আমার বিস্ময় জাগায়। আনিস ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, সমালোচনা করে, সহযোগিতা করে তুমি যখন কখনো গর্বে, কখনো চিন্তায়, কখনো বেদনায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে যেতে তখনো আমি দেখেছি-জেনেছি তুমি ধীরস্থির কর্মব্যস্ত থেকেছ। তোমাকে আমি খুব আপন ভাবি, ভালোবাসি। সেই তুমি এখন সুদূর লন্ডনে তীব্র বেদনায় নীল হয়ে যাচ্ছ সহযোগী, বন্ধু, স্বামী আনিসুল হক, আমাদের প্রিয় মেয়র আনিসুল হকের প্রয়াণে।
আমরা আনিস ভাইয়ের শুভানুধ্যায়ীরা তোমার পাশে আছি। আনিস ভাই আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে, চিন্তায়। আমাদের চোখের সামনে তিনি আর থাকবেন না। কিন্তু বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে। আমরা তোমার পাশে আছি, রুবানা।
মালেকা বেগম: চেয়ারপারসন, সোশিওলজি অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি।