এম আরমান খান জয়,গোপালগঞ্জ :
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার বান্ধাবাড়ি গ্রামের এক সরকারী কর্মকর্তা সামাজিক উন্নয়ন কাজে বাঁধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর টুঙ্গিপাড়ায় কর্মরত রুহুল আমিন শেখের কাছে ওই এলাকার সাধারন মানুষ যেন জিম্মি হয়ে আছে। কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি নির্ভর এবং তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই তারা কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার আগেই এর সুষ্ঠ সমাধান চায়।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের বটবাড়ি গ্রাম থেকে বান্ধাবাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার জায়গায় সাধারন মানুষের যাতায়াতের জন্য কোন রাস্তা না থাকার কারনে দুই ইউনিয়নের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কৃষকসহ সহ¯্রাধিক সাধারন মানুষকে প্রতিদিন চরম ভোগান্তি সহ্য করতে হয়। বান্ধাবাড়ি এলাকার কয়েকজন যুবকের ডাকে সাড়া দিয়ে গ্রামের সকলে একত্রিত হয়ে ২০১৫ সালে নিজেদের স্বেচ্ছা শ্রমে ও নিজেদের অর্থায়নে প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তাটি নির্মান করে করে কিন্তু সাধারন মানুষের চলাচলের ওই রাস্তাটি নিচু হওয়ার কারনে বর্ষা মৌসুমে তা ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়ে। দীর্ঘ দিন পরে সকলের প্রচেষ্টায় সরকারী অর্থায়নে ওই রাস্তাটির অনুমোদন হয় কিন্তু নতুন করে রাস্তা নির্মানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় টুঙ্গিপাড়ায় কর্মরত যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে সরকারী কর্মকর্তা রুহুল আমিন শেখ। শুধু তাই নয় তিনি রাস্তাটি নির্মানের ব্যাপারে রাস্তা নির্মানে উদ্যোগ নেওয়া যুবকদের হত্যা করার হুমকিও দেন। এ ব্যাপারে কোটালীপাড়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা রুহুল আমিন শেখ এলাকার সাধারন মানুষকে হুমকি দিয়ে বলেন, দুইটা গ্রাম কেন আরো ১০ গ্রামের মানুষ একত্র হলেও আমাকে কিছু করতে পারবে না, আমি একজন সরকারী কর্মকর্তা। আমার অনেক ক্ষমতা। তিনি শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাস্তাটির নির্মান কাজ বন্ধ করে দেন।
কে এই রুহুল আমিন শেখ : গোপালগঞ্জ জেলাধীন কোটালীপাড়া থানার বান্ধাবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর বান্ধাবাড়ির হাড়দোর গ্রামের একটি মসজিদের মোয়াজ্জেন মোঃ মঈন উদ্দিন শেখের ছোট ছেলে মোঃ রুহুল আমিন শেখ। তিনি একজন যুব উন্নয়নের কর্মরত কর্মকর্তা। সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার সুবাধে তার নাকি অনেক ক্ষমতা। রুহুল আমিন শেখকে নিয়ে বিভিন্ন ফেসবুকে লেখা তথ্যে জানা যায়, ক্ষমতা শালী ও অবৈধ টাকার পাহাড়কারি যুব উন্নয়নের কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন শেখ গ্রামের উন্নয়নের রাস্তা তৈরীর ব্যাপারটি জানতে পেরে সরাসরি এলজিইডি প্রকল্পের প্রকৌশলীর নিকট যেয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে কাজটি বন্ধ করে দেয় এবং তাতেই ক্ষান্ত না হয়ে যারা যারা গ্রামের উন্নয়ন মুলক কাজে জড়িত তাদেরকে মোবাইল ফোনে ও সরাসরি জীবন নাশের ও মামলার ভয় দেখায় এবং চেয়ারম্যান থেকে আরম্ভ করে গ্রামের সকল গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গকে অকথ্য ভাষায় গারাগালি করে। সে বলে তার কিছুটা জায়গা রাস্তায় যাবে তাই সে কিছুতেই উন্নয়ন মুলক কাজে রাস্তা হতে দেবে না। তবে রাস্তাটা তারও খুব প্রয়োজন তবুও তিনি বলে গ্রামের সকলে একদিক আমি একা একদিক কেউই আমার সাথে পারবেনা কারন আমি সরকারি কর্মকর্তা। তখন জীবন নাসের হুমকি ও বিভিন্ন ভয়ভীতির কারনে মোঃ রুহুল আমিন শেখের নামে কোটালীপাড়া থানায় জীবন রক্ষার্থে একটি সাধারন ডায়েরী করা হয় এবং থানা থেকে তদন্তে এলে বিভিন্ন লোককে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা মেলে এবং রুহুল আমিন শেখের বিরুদ্ধে গ্রামের জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে কিন্তু তার পরও কোন সুফল পায়নি গ্রামের হতদরিদ্র ও সাধারন মানুষ। হাজারও মানুষেরর উন্নয়নের জন্য চেয়ারম্যান, মেম্বার, সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ও গ্রামের গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ একটি সভার ব্যবস্থা করেন। সভার কার্যক্রম শুরু হলে সেখানে রাস্তার উন্নয়নের জন্য সভার সভাপতি চেয়ারম্যান ও গন্যমান্য ব্যাক্তিগন রাস্তার জন্য আবেদন করে সকল জমির মালিক দেরকে স্বাক্ষর সম্পাদন করতে বলেন। কথামত সকল জমির মালিকগন নিজ নিজ স্বাক্ষর সম্পাদন করে চেয়ারম্যান এর নিকট আবেদন পত্রটি জমা দেই। চেয়ারম্যান আবেদন পত্রটি এলজিইডি প্রকল্প থেকে পাস করান। এলজিইডি থেকে প্রকৌশলীরা এসে নিয়ম মোতাবেক মাপ ঝোক করে নিয়ে যায় এবং কাজের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু যুব উন্নয়নের কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন শেখ গ্রামের উন্নয়নের রাস্তার ব্যাপারে এলজিইডি প্রকৌশলীদের কে মামলার ভয় দেখিয়ে কাজটি বন্ধ করে দেয়।
উল্লেখ্য রাস্তাটিতে মোট ৩০ জনের জমির উপর দিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে ২৯ জন জায়গার মালিক লিখিত ভাবে সম্মতি প্রদান করলেও একমাত্র রুহুল আমিন শেখ কোন সম্মতি দেননি। রাস্তাটি নির্মানের জন্য রুহুল আমিন শেখ কে সম্মতি দেওয়ার জন্য অনেকেই অনুরোধ করেছেন।
এ ব্যাপারে রুহুল আমিন শেখের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বর্তমানে খুব অসুস্থ তা ছাড়া আমার অফিসে ঢাকা থেকে অডিট টিম এসেছে সে জন্য ব্যস্ত আছি। আমার এক আতœীয়র সাথে ডিসি স্যারের কথা হয়েছে তিনি আমাকে যেতে বলেছেন। আমি রবিবার ডিসি স্যারের সাথে দেখা করবো এবং রাস্তার ব্যাপারে কথা বলবো। আমি এলাকার উন্নয়ন চাই তবে আমার জমি দিয়ে নয়। আমি রাস্তা করতে আমার জমি দেব না তাতে আমার যা হয় হবে তা নিয়ে আমি ভয় করি না। এলাকাবাসী আমার কাছ থেকে কি ভাবে জায়গা নেয় তা দেখে নেব। তিনি আরো বলেন, আপনার মোবাইল নম্বরটা দেন আমি রবিবার অথবা সোমবার আপনার সাথে দেখা করবো কারন এখনো বেতন পায়নি। নিউজটি না করার জন্যও তিনি বার বার নিষেধ করেন।
ওই রাস্তাটি নির্মান হলে এলাকার হাজার মানুষের ইরি মৌসুমে ধান নেয়ার জন্য ও প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অগনিত ছাত্র-ছাত্রীদের নিজ নিজ শিক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সুবিধা হবে। সে জন্য রাস্তাটি নির্মানের জন্য এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, জেলা প্রশাসকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু সহযোগিতা কামনা করেছে।