স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে কলেজ ও মাদরাসাপড়–য়া দুই ছাত্র এবং ১৩ বছরের এক বেকারি শ্রমিক নিখোঁজের পর আজো পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদের একজন মাদরাসাছাত্র মাছুমকে (১৭) গত ১৬ নভেম্বর রাতে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে জোরপূবর্ক বাড়ি থেকে সাদা মাইক্রোতে এবং অন্যজন কলেজছাত্র মাকসুদকে (২২) ১২ অক্টোবর বিকেলে গ্রামীণ ফোন কোম্পানির স্টিকার লাগানো একটি কালো রংয়ের পাজেরো জিপে টাওয়ার নির্মাণের স্থান দেখাতে সহযোগিতার কথা বলে অভিনব কৌশলে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সম্পর্কে এরা দু’জন চাচাতো ভাই। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় থানা পুলিশ, ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশ, র্যাবসহ প্রশাসনের সব স্টেশনে খোঁজ নিয়ে তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে কোটচাঁদপুর শহরের লিমা বেকারিকর্মী আসিফ ( ১৩) গত ১৭ নভেম্বর রাতে নিখোঁজ হয়েছে। সে উপজেলার কাগমারি গ্রামের আবু হানিফের ছেলে। বেকারিতে কাজ শেষে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার পর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। এলাকাবাসী ও নিখোঁজ মাকসুদ ও মাসুমের পারিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হরিন্দিয়া গ্রামের মাদরাসা শিক্ষক আমিনুল ইসলামের ছেলে মাছুম বিল্লাহকে গত ১৬ নভেম্বর রাতে সাদা পোষাকে ৮-১০ জন লোক একটি সাদা রংয়ের মাইক্রোতে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা বাড়িতে ঢুকে নিজেদের প্রশাসনের লোক দাবি করে ঘরের দরজা খুলতে বলে। এ সময় তারা বিভিন্ন ঘর তল্লাশি করে মাকসুদকে না পেয়ে তার বাবাকে দিয়ে মোবাইলে ডেকে আনে এবং চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নেয়। ১২ অক্টোবর বিকেলে আমিনুল ইসলামের ছোট ভাই মোমিনুল ইসলামের ছেলে মাকসুদ ও পাশের বাড়ির সাইফুলসহ কয়েকজন বাড়ির পাশের মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে মসজিদের সামনে আসে। এ সময় মসজিদের সামনে কালো রংয়ের একটি পাজেরো জিপ দাঁড়িয়ে ছিল।
গ্রামীণ ফোন কোম্পানির স্টিকারযুক্ত পাজেরো জিপ থেকে তিনজন লোক নেমে এসে তাদের জানায়, এই এলাকায় গ্রামীণ ফোনের একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। তাই ভালো একটি লোকেশনে জমি খুঁজছেন তারা। এ অভিনয় করে তাদের সাথে নিয়ে অল্পদূর যাওয়ার পর মাকসুদ ও সাইফুলকে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর সাইফুলকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে মাকসুদকে তাদের সাথে নিয়ে যায়। সরল বিশ্বাসে সে তাদের সাথে যায়। সেই থেকে মাকসুদ নিখোঁজ রয়েছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, ১৬ নভেম্বর বিকেলে সাদা পোষাকে দু’জন লোক মোটরসাইকেলে এসে মাসুমদের বাড়ির পাশের তার এক চাচা আবু বকরের কাছে তার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে চায়। এ সময় তারা ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বর নিয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আবার তারা ০১৭৩৩২২৪৪০৩ ও ০১৯৯৫-৩৩৬৩৭১ মোবাইল থেকে ফোন করে মাছুমের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ নেয়। এর পরই রাতে তাকে তুলে নেয়া হয়। যার ফলে ওই ব্যক্তিদের সাথে ঘটনার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অনেকের সন্দেহ রয়েছে। এদিকে, এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার মো: ওহিদুল ইসলাম ওই মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে এটা র্যাব ক্যাম্পের নম্বর বলে দাবি করা হয়। র্যাবের কোন ক্যাম্পের নম্বর জানতে চাইলে তারা তা এড়িয়ে যান। ওই মেম্বার ও মাছুমের বাবা আমিনুল ইসলাম বিষয়টি স্থানীয় থানার ওসিকে জানিয়ে জিডি করেছেন। এ ছাড়া ১২ অক্টোবর যে পাজেরো জিপে মাকসুদকে তুলে নেয়া হয়েছে (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৭৭৬৯) সে সম্পর্কে বিআরটিএতে খোঁজ নিয়ে তারা জেনেছেন, ওই গাড়িটি কর কমিশন, বিজয় নগর, ঢাকার। যার ফলে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। নিখোঁজ মাসুম ও মাকসুদ সম্পর্কে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বর ওহিদুল ইসলাম জানান, এরা কোনো রাজনীতি বা দল করে না বলে আমি জানি। অভাব অনটনের কারণে মাকসুদ কোটচাঁদপুর সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দোকানে কর্মচারীর কাজ করেছে। আর মাসুম হরিন্দিয়া মাদরাসায় আলিম প্রথমবর্ষে অধ্যায়নরত। কোটচাঁদপুর থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, নিখোঁজের ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে যে সন্দেহজনক মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে সেগুলো কার তা জানতে সিডিআর আনতে দিয়েছি। তারপরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।