এম আরমান খান জয়,গোপালগঞ্জ :
গোপালগঞ্জে গাছ আছে, রসও আছে; কিন্তু গাছ কাটার গাছি নেই। তাই প্রতি বছর শীতের সময় দূর থেকে রস কিনে এনে পিঠে-পায়েশ খাওয়াতে হয় আত্মীয় স্বজনদের। তার মধ্যে অর্ধেকটা থাকে পানি। অথচ নিজের ভিটার পাশে রয়েছে ৯ টি খেজুরগাছ।’ গতকাল দুপুরে গোপালগঞ্জে সদর উপজেলার বাজুনিয়া এলাকার বৃদ্ধ রকন বিশ্বাস একটি দোকানের সামনে বসে আক্ষেপ করে এ কথাগুলো বলছিলেন।
তিনি আরো জানান, তার গ্রাম ও ইউনিয়নসহ উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার খেজুরগাছ রয়েছে। আজ থেকে ৭/৮ বছর আগে শীত মওসুমে গাছিরা এসব গাছ পরিষ্কার করে কেটে তা থেকে রস আহরণ করতেন। প্রচুর রস হতো। প্রতিদিন গাছিকে দিয়ে যে অর্ধেকটুকু পেতেন তা দিয়ে শীতের সময় পিঠে-পায়েশ খেয়ে সারা বছরের গুড় বানিয়ে রাখতেন। সে ঘটনা এখন গল্প হয়ে গেছে। এখন শীতের সময় নাতি-নাতনীদের দূর-দূরান্ত থেকে প্রতি লিটার রস ৫০ টাকা দরে কিনে এনে পিঠে-পায়েশ খাওয়াতে হয়। তার মধ্যে অর্ধেকটা থাকে পানি। তা দিয়ে পিঠে-পায়েশ বানালে আগের মতো আর স্বাদ লাগে না।
কাঠি গ্রামের কৃষক আজাদ জানান, নিজেদের গাছ থাকতেও তারা আর আগের মতো পিঠে-পায়েশ খেতে পারেন না। গাছিরা কোনো কিছুর বিনিময়ে এখন খেজুরগাছ কাটতে চান না।
এ ব্যাপারে বাজুনিয়া গ্রামের কালাচাঁদ গাছি জানান, এখন গাছ কেটে যে রস ও গুড় পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসারের খরচ চালানো সম্ভব নয়। কারণ যে হারে নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যমূল্য বেড়েছে তাতে অন্য পেশায় না গিয়ে উপায় নেই। কাজুলিয়া বাজারের প্রবীণ গুড় ব্যবসায়ী সুজন বসু ও বাবুল শিকদার জানান, এ উপজেলায় প্রতি বছর প্রায় দেড় শ’ টন খেজুরের গুড়ের চাহিদা রয়েছে, যা পার্শবর্তি খুলনা ও যশোরর বিভিন্ন এলাকা থেকে এনে বিক্রি করতে হয়।গোপালগঞ্জ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় কমপক্ষে ৭/৮ হাজার খেজুরগাছ রয়েছে। যা ঠিকমতো গাছিরা পরিচর্যা করলে বছরে শতাধিক টন খেজুরের গুড় উৎপাদন হতো ।