গলদা চিংড়ির মূল্য কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেকে মহাজন ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গলদা চিংড়ির চাষ করে বিপাকে পড়েছে। উৎপাদন ব্যয় না ওঠায় অনেকে চাষ ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।
সাতক্ষীরা শহরের গলদা চিংড়িচাষি আবদুস সালাম জানান, তিনি রামেরডাঙ্গা এলাকায় ২০ বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ির চাষ করেছেন। তার প্রতি বিঘা জমিতে চাষ করতে ব্যয় হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। নিজের মূলধনের সঙ্গে মহাজনের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এ চাষ করেছেন। মাত্র চার মাস আগে বাগদা চিংড়ির যে মূল্য ছিল, তা এখন অর্ধেকে নেমে আসায় তাঁর উৎপাদন ব্যয় উঠবে না।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায় ১১ হাজার ৬৩০টি গলদা চিংড়িঘেরে ১১ হাজার ৩৮৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। চলতি বছর গলদা চিংড়ির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।
সাতক্ষীরার দেবহাটার দেবীশহর এলাকায় উপজেলার রমেশ স্বর্ণকার জানান, তিনি দুটি ঘেরে ৮০ বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। উৎপাদন হয়েছে ভালো। কিন্তু গলদা চিংড়ির বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় তাঁর দুশ্চিন্তার শেষ নেই। মাত্র চার মাস আগে প্রতি কেজি (১২টা) চিংড়ির মূল্য ছিল ৯৫০ টাকা। তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৭০ টাকায়। একইভাবে অন্যান্য গ্রেডের গলদার মূল্যও কমেছে একই হারে। ফলে তিনি লোকসানে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন। একই এলাকার মাজাদুল ইসলাম গলদার চাষ করেছেন ৪২ বিঘা জমিতে। চিংড়ির বাজারদর কমে যাওয়ায় তাঁর উৎপাদন ব্যয় উঠবে না বলে জানান।
সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ি এলাকার গলদা চিংড়িচাষি জালালউদ্দীন আহমেদ জানান, তিনি এক যুগের বেশি সময় বাগদা চাষের পাশাপাশি গলদা চিংড়ি চাষ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে ২৫ বিঘা জমিতে গলদার চাষ করেছেন। তাঁর ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টাকা। এ জন্য তিনি স্থানীয় মহাজন ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু গত বছর যে বাগদা বিক্রি করেছিলেন ১ হাজার ১০০ টাকায়। চলতি বছরের প্রথম দিকে তা বিক্রি করতে হয়েছে ৮০০-৯০০ টাকায়। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫০-৫০০ টাকায়। উৎপাদন ভালো হলেও গলদার বাজারদর কমে যাওয়ায় তাঁর আসল টাকাও উঠবে না। ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে তাঁর ভাবনার শেষ নেই।
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান জানান, কয়েক বছর আগে ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম ভেনামি জাতের চিংড়ি উৎপাদন করতে গিয়ে সফল হয়নি। গত দুই বছর তারা এ জাতের চিংড়ি চাষে সফল হয়েছে। ভেনামি জাতের চিংড়ি ওই সব দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন হওয়ায় বিদেশে গলদার চাহিদা কমে গেছে। চাহিদা না থাকায় দামও কমে গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সহিদুল ইসলাম সরদার জানান, গলদার উৎপাদন ভালো হয়েছে। মূল্য কিছুটা কমেছে। কতটা কমেছে, তা তিনি না জেনে বলতে পারবেন না।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামীম হায়দার জানান, বাংলাদেশ থেকে গলদা চিংড়ির ৯০ শতাংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাজ্যে। কিন্তু যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক মন্দা থাকায় তারা গলদা নিচ্ছে না বললেই চলে। ফলে গলদা চিংড়ির মূল্য কমে গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা চিংড়িচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বাবলা বলেন, যেভাবে চিংড়ির মূল্য কমে গেছে তাতে চাষিরা লোকসানে পড়বেন। নতুন বাজার সৃষ্টি করতে না পারলে গলদা চিংড়ি চাষে ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।