ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দ্বন্দ্বের জেরে পাঁচটি এতিমখানার জন্য বরাদ্দ পাঁচ মেট্রিক টন সাধারণ ত্রাণের (জিআর) চাল ছয় মাসেও দেওয়া হয়নি।
এ ঘটনায় ইউএনওর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলেছেন পিআইও। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বরং পিআইও এতিমখানাগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছে ঘুষ দাবি করেছিলেন।
ইউএনও ও পিআইওর কার্যালয় এবং এতিমখানা সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে উপজেলায় জিআরের ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে চার মেট্রিক টন চাল শৌজালিয়া, আওরাবুনিয়া ও আমুয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করে উপজেলা প্রশাসন। রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে পাঁচটি এতিমখানার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও একক সিদ্ধান্তে বাকি ছয় মেট্রিক টন চালের মধ্যে পাঁচ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেন। তাঁর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. রফিকুল ইসলাম ইউএনওর স্বাক্ষর করা পত্রে পাঁচটি এতিমখানাকে এক মেট্রিক টন করে জিআরের চাল বরাদ্দ দেওয়ার জন্য পিআইওর কার্যালয়ে পাঠান।
এতিমখানাগুলো হলো উপজেলার পূর্ব ছিটকি দারুল সুন্নাত এতিমখানা, ছোনাউটা আকবর মুসলিম এতিমখানা, খানকায়ে আশরাফিয়া এতিমখানা, উত্তর চড়াইল চানবরনেছা এতিমখানা ও জয়খালি শামীম মঞ্জিল সাহিনা এতিমখানা। কিন্তু পিআইও মফিজুর রহমান ইউএনওর পাঁচটি এতিমখানার ডিও লেটার ও নোট শিটে স্বাক্ষর করেননি। এ কারণে এতিমখানাগুলো চাল তুলতে পারেনি।
পূর্ব ছিটকি দারুল সুন্নাত এতিমখানার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরল ইসলাম আকন বলেন, ‘ইউএনওর স্বাক্ষরিত একই চিঠিতে পাঁচটি এতিমখানার বরাদ্দকৃত চাল আনতে গেলে পিআইও বলেন ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আবার ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি পিআইওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তাঁদের ঠেলাঠেলির কারণে আমাদের এতিম শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি এতিমখানার পরিচালনা কমিটির সভাপতি বলেন, বরাদ্দ পেতে কর্মকর্তাদের পেছনে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এ ঘটনায় পিআইও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (কাবিখা) পরিচালকের কাছে ইউএনওর বিরুদ্ধে প্রতি এতিমখানায় বরাদ্দপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে ইউএনও জেলা প্রশাসকের কাছে পিআইওর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক গত জুনে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বরকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন।
পিআইও মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘এতিমখানার সভাপতিদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ইউএনও প্রতিটি এতিমখানায় চাল বরাদ্দ দিয়ে ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। টাকা নিয়ে তিনি একক সিদ্ধান্তে চাল বরাদ্দ দেওয়ায় আমি ডিও লেটারে ও নোট শিটে স্বাক্ষর করিনি। এই প্রেক্ষাপটে তিনি আমার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।’
ইউএনও শরীফ মোহাম্মদ ফাইজুল আলম বলেন, ‘আমি পাঁচটি এতিমখানায় চাল বরাদ্দ দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সেরে পিআইওর দপ্তরে ডিও লেটার পাঠিয়েছি। কিন্তু তিনি (পিআইও) খামখেয়ালিভাবে ডিও লেটারে স্বাক্ষর না করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘুষ গ্রহণের অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আসলে পিআইওই ডিও লেটার পাওয়া এতিমখানাগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছে ঘুষ দাবি করেছিলেন। আমি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।’