রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আসা অব্যাহত রয়েছে।
আজ শনিবার ও আগের দিন শুক্রবার তিন শতাধিক রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন।
শনিবার সকালে ১২৯ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ টেকনাফের সাবরাং নয়াপাড়াসহ বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এসেছেন। তাদেরকে তালিকাভুক্ত করে ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আসা ৮৫ জন রোহিঙ্গাকে তালিকাভুক্ত করে ক্যাম্পে পাঠিয়েছে সেনাবাহিনী। এছাড়া রাতে ট্রলার বা ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে আসা অব্যাহত রয়েছে। এপারে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া এবং ওপারে রাখাইন রাজ্যের মংডুর দংখালী এলাকায় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আসার জন্য।
এদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
রোহিঙ্গাদের মতে, মিয়ানমার সরকার আগেও অনেকবার চুক্তি করে তা পালনে গড়িমসি করেছে। তাই এবারের চুক্তি নিয়েও সংশয় রয়েছে তাদের মধ্যে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ নাগরিক মর্যাদার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা।
উখিয়ার থাইংখালী, বালুখালী, কুতুপালং অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রাখাইনের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ফয়েজ, দিল মোহাম্মদ, আব্দুস সালাম, পেঠান আলীসহ অনেক রোহিঙ্গা নেতা গত শুক্রবার জানিয়েছেন, চুক্তির ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা তাদের ফেলে আসা সহায় সম্বল ও বাপ দাদার ভিটে মাটিতে ফিরে যেতে উদগ্রীব। রোহিঙ্গারা চুক্তিতে খুবই আনন্দিত। তবে যেসব কারণে নিজের দেশ ও সর্বস্ব ছেড়ে রোহিঙ্গারা উদ্বাস্তু হয়ে এসেছেন সেসব সমস্যার যদি কোনো সমাধান না হয় তাহলে তারা আবারও রাখাইনে সেনাবাহিনীর অগ্নিকুণ্ডে ফিরে যাবেন না।
তারা আরো জানান, মিয়ানমারে ১৩৫টি জাতি গোষ্ঠিকে স্বীকৃতি দিলেও রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না। এমনকি ১৯৮২ সালের আইন অনুযায়ী তাদের নাগরিকত্বও কেড়ে নেয়া হয়েছে। এবার তাদের রোহিঙ্গা স্বীকৃতি ও নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার নিশ্চিত আশ্বাস না পেলে তারা রাখাইনে ফিরে যেতে আগ্রহী নন বলে জানান।
রোহিঙ্গা নারী গোলজার বেগম জানান, রাখাইনে তাদের ঘরবাড়ি, জায়গা-জমি সব আছে। ফিরতে পারলে তিনি খুশি।
কুতুপালং শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শামশু (৪০) চুক্তির কথা শুনে বলেন, দেশরলাই মন হাদের। আজিয়া হউক কালিয়া হউক আরার দেশত ফিরি যাইয়্যুম। অর্থাৎ দেশের জন্য মন কাঁদে। আজ হোক কাল হোক আমরা আমাদের দেশে ফিরে যাব।
এদিকে, কক্সবাজারের সাতটি কেন্দ্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে অধিকাংশ রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী পাসপোর্ট অধিদপ্তর। ততোদিনে ১০ থেকে ১২ লাখ রোহিঙ্গার নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান।
শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন নিবন্ধন কেন্দ্র পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে এই রোহিঙ্গা তথ্যভান্ডার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন তিনি।
রাখাইনে গণহত্যা থেকে বাঁচতে কেবল প্রাণ নিয়েই বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন রোহিঙ্গারা। গবাদী পশু, ধান, সহায় সম্পত্তি সবকিছুই ফেলে এসেছেন তারা। পুড়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এমনকি নাগরিকত্বের প্রমাণও। এ পরিস্থিতিতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের পর ছবিযুক্ত কার্ডটিকে গুরুত্বের সাথে দেখছেন রোহিঙ্গারা। একইসাথে তারা নাগরিকত্বসহ রোহিঙ্গা হিসেবে জাতিগত স্বীকৃতি প্রদানের দাবি করেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের সঠিক তথ্য সংরক্ষণ করতে উখিয়া ও টেকনাফে সাতটি কেন্দ্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে সরকার।