ব্যাট তুলে রাখার পর হতে চেয়েছিলেন জাতীয় দলের কোচ। কিন্তু বিধিলিপিতে লেখা ছিল কোচ নয়, হবেন ক্রিকেট প্রশাসক। বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (সিএবি) সভাপতির পদে বসাকে এভাবেই দেখছেন সৌরভ গাঙ্গুলি।
ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা এ অধিনায়ক শুক্রবার ‘ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ ইস্ট ২০১৭’ অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি কোচ হতে ‘মরিয়া’ ছিলেন। কিন্তু জীবনের গতিপথ তো কেউ আগে থেকে জানে না। সৌরভ এটা এখন ভালোই জানেন , ‘আপনি যা করতে পারেন, আপনার সেটাই করা উচিত। ফলাফল নিয়ে কখনো ভাবা উচিত না। জীবন আপনাকে কোথায় নিয়ে যাবে, তা আমরা কেউ জানি না। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া যাই, তখন আমি দলের সহ-অধিনায়কও হতে পারিনি। শচীন ছিল দলের অধিনায়ক, কিন্তু কয়েক মাস পরই আমি ভারতের অধিনায়ক হয়ে যাই।’
২০০৭ সালে ওয়ানডে ছাড়ার পরের বছর টেস্ট ক্রিকেট থেকেও অবসর নেন সৌরভ। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়ার মৃত্যুর পর সিএবি সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অথচ সৌরভ তখন জাতীয় দলের কোচ হতে মরিয়া ছিলেন! সেটি হতে পারেননি। কেন পারেননি, তার একটা ব্যাখ্যা মনে মনে দাঁড় করিয়েছেন. ‘প্রশাসনে ঢোকার সময় জাতীয় দলের কোচ হতে মরিয়া ছিলাম। ডালমিয়া ডেকে বলেছিলেন ‘‘অন্তত ছয় মাস চেষ্টা করে দেখ না”। তিনি চলে যাওয়ার পর আর কেউ ছিল না। তাই আমি সিএবি সভাপতির দায়িত্ব নিই। অথচ সভাপতি হতে মানুষের কম করে হলেও ২০ বছরের মতো সময় লাগে।’
গ্রেগ চ্যাপেল ভারতের কোচ থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে মনোমালিন্যের ব্যাপারেও খোলাখুলি বলেছেন সৌরভ। ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অধিনায়ক হওয়ার পরও ২০০৬ সালে চ্যাপেল তাঁকে দল থেকে ছাঁটাই করেছিলেন। কিন্তু পারফরম্যান্সই আবারও দলে ফিরিয়েছিল তাঁকে ফিরিয়ে এনেছিল দলে। এর দুই বছরের মাথাতেই নিজের অবসরের কথা জানিয়ে দেন তিনি, ‘২০০৮ সালে অবসর ঘোষণার সময় শচীন একদিন লাঞ্চে এসে বলল “এমন সিদ্ধান্ত নিলে কেন?” বললাম, আর খেলতে চাই না তাই। কিন্তু সে বলল, তোমাকে সেরা হিসেবে দেখার এটাই দারুণ সময়। গত তিন বছর ধরেই সেরা সময় কাটাচ্ছ। আসলে আমি অবসর নিয়েছিলাম কারণ একপর্যায়ে মনে হয়েছিল, যথেষ্ট হয়েছে। ব্যাপারটা যে প্রচুর খেলার জন্য তা নয়, কারণ প্রতিবারই দলে ডাক পেতে হতো। সেই দিনগুলো মনে করে ভাবি, ব্যক্তি পর্যায়ের খেলাধুলাই অনেক ভালো, কারণ দলের ওপর নির্ভর করতে হয় না।’
ভারতীয় ক্রিকেট দলকে সেরাদের কাতারে তুলে আনা অধিনায়কটি দলগত খেলার কিছু অসুবিধা সম্পর্কে ব্যাখ্যাও দেন, ‘প্রায়ই বলে থাকি লিয়েন্ডার (ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড়) এভাবে খেলছে কারণ সে নিজেই তাঁর জীবনের নিয়ন্তা। কিন্তু এর বিপরীতে (দলগত খেলা) আপনি বাজে পারফর্ম করলে বাদ পড়বেন এবং ফেরা কঠিন হবে। বাদ পড়ার পরে ফিরে আসাটা সব খেলারই অংশ। ডিয়েগো ম্যারাডোনা, রাহুল দ্রাবিড়ের মতো কিংবদন্তিরা আরেকজনের জন্য জায়গা ছেড়েছেন। কিন্তু তাঁরা আরও কিছুদিন সহজেই খেলতে পারত।’ সূত্র: জি নিউজ।