আগৈলঝাড়ায় জ্বালানী সংকটের কারণে গোবরের লাকড়ির কদর বাড়ছে

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি বরিশাল

Agailjhara Photo- 24-11-17 (1)

 

 

 

 

 

অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় গাছ কেটে প্রতিদিন ইট ভাটায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করায় দিন দিন জ্বালানী সংকট প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্বালানী সংকট থেকে বাঁচতে এ উপজেলার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষ এখন গোবরের তৈরি শলার লাকড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানা গেছে, গোবরের কম্পোস্ট সার খুবই উৎকৃষ্ট হওয়ায় কৃষকরা জমিতে গোবর দিয়ে ভাল ফলন ফলিয়ে থাকে। ফলে সবসময়ই কৃষকদের মাঝে গোবরের কদর ব্যাপকভাবে দেখা যায়। যাদের গরু আছে কিন্তু আবাদি জমি নেই তারাও কৃষকদের কাছে গোবর বিক্রি করত। কিন্তু বর্তমানে কৃষকদের গোবরে ভাগ বসিয়েছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মহিলারা। তারা জ্বালানীর বিকল্প হিসেবে গোবর ব্যবহার করছেন। গোবরের তৈরি লাকড়ি দিয়ে নিজেদের জ্বালানী সমস্যার সমাধান করেও বাজারে বিক্রি করে সংসারের অভাব দূর করছেন। এ উপজেলায় দিন দিন জ্বালানী সংকট মারাতœক আকার ধারণ করছে। জ্বালানী সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির পরিবারগুলোকে। জ্বালানীর অভাবে চুলা জ্বালাতে পারছেনা দরিদ্র জনগোষ্ঠির গৃহিণীরা। দফায় দফায় গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে জ্বালানী কাঠের উপর দিন দিন চাপ বেড়েই চলেছে। কিন্তু দালাল টাইপের এক শ্রেণীর লোক ভিন্ন জেলায় ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য এই উপজেলার ছোট বড় গাছ বিক্রি করে দিচ্ছে। প্রতিদিনই গৈলা-সাহেবের হাট রোড সহ অন্যান্য স্থান দিয়ে ১৫-২০টি কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকে করে এই কাঠ অন্যত্র পাচার হচ্ছে। এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গোবরের তৈরি মুইঠ্যা বা শলার লাকড়ি। বর্তমানে জ্বালানী সংকট মোকাবেলায় গোবরের শলার লাকড়ি তৈরি করা হচ্ছে পুরোদমে। আর গোবরের শলার লাকড়ি জ্বালানীর চাহিদা মেটানোর পর বিক্রি করে অভাব দূর করছেন অভাবগ্রস্থ পরিবারের গৃহিণীরা।

Agailjhara Photo- 24-11-17 (2)

 

 

 

 

 

গোবরের শলার তৈরি লাকড়ি এমন এক প্রকার জ্বালানী যা তৈরি করা খুবই সহজ। খরচও কম এবং পরিবেশের কোন ক্ষতি করেনা। পরিবেশ সহায়ক এ জ্বালানী তৈরিতে উপকরণ হিসেবে প্রয়োজন গরু বা মহিষের গোবর, পাট খড়ি, ধানের তুষ (কুড়া)। গোবরের শলার লাকড়ি তৈরির আগে মাপ মতো পাট খড়ি কেটে গোবর ও তুষ (কুড়া) একত্রে মিশিয়ে পাট খড়ির সঙ্গে এঁেট রোদে শুকাতে হয়। এছাড়াও মুঠো করে ঘষি বানিয়ে রোদে শুকিয়েও ব্যবহার করা যায়। কিছুদিন আগেও এর ব্যবহার ছিল গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে জ্বালানী সংকট ও এর দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন গ্রাম ছেড়ে শহরেও গোবরের শলার লাকড়ির কদর বেড়েছে। প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ এ গোবরের শলার লাকড়ি স্বল্পমূল্যে কিনে জ্বালানী হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহার করছে। গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের মহিলারা এই গোবরের শলার লাকড়ি বা মুইঠ্যা তৈরি করে নিজেদের জ্বালানীর চাহিদা মিটিয়েও বিক্রি করে সংসারের খরচ চালিয়ে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *