সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা সিলেটের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যা সিলেট সিটি’র প্রান কেন্দ্র চৌহাট্রায় অবস্থিত। ঐতিহ্যবাহী সরকারী আলিয়া মাদ্রাসার নিরাপত্তাকে অগ্রাহ্য করে নিরাপত্তা বেস্টনির মধ্যেই পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধূরী।
নিরাপত্তা বেস্টনির মধ্যেই পাবলিক টয়লেট নির্মাণের ঘটনায় সিসিক এবং সংশ্লিষ্ট প্রধানদের বক্তব্যে ভিন্নমত দেখা গেছে। এ নিয়ে নগরজুড়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। অনেকেই এটিকে ঐতিহ্যবাহী ইসলামী প্রতিষ্ঠান আলিয়া মাদ্রাসার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী।
আলিয়া মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এর আগেও ঐতিহ্যবাহী সিলেট আলীয়া মাদরাসা নিয়ে অনেক য়ড়যন্ত্র হয়েছে। দোকান কোঠার নামে শতবর্ষের ঐতিহ্যমন্ডিত এই বিদ্যাপীঠ দখলের নানান পায়তারা করা হয়েছে।
এবার মেয়র আরিফুল হক সেই পথেই হাঁটছেন। তার যদি কোনো ভালো উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে পাশেই সদর হাসপাতালের সীমানার ভেতর অনেক জমি পড়ে আছে তিনি চাইলে সেখানে টয়লেট নির্মান করার চিন্তা করতে পারতেন। ঐ জায়গাটি অনেক সুবিধাজনক কিন্তু তিনি তা না করে একেবারে চলে এসেছেন মাদরাসার সীমানায়। সিসিক মেয়র আরিফুরের হকের এমন সিদ্ধান্ত নেবার আগে এই নগরীর ইসলাম প্রিয় জনতার কথা চিন্তা করা উচিত ছিলো।
ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক ছাত্র দেশে বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছেন। অনেক সোনার ছেলে জন্ম দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। সাবেক স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, খতিব ওবায়দুল হক, প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের মতো কৃতি সন্তান এই মাদরাসার ছাত্র। মেয়র অারিফ সেসব কথা ভুলে গেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩নভেম্বর) দ্বিপ্রহরে আলীয়া মাদরাসা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসা এবং সিভিল সার্জন অফিসের ভূমিতেই সীমানা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এই দেয়ালের মধ্যেই পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করবে সিসিক। আর এতে অর্থ সহায়তা দেবে ওয়াটার এইড নামে একটি এনজিও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই ভূমিতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করবে ওয়াটার এইড নামে একটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। তারা ইতিমধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনেও এরকম প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। তবে এখানে কোন প্রকার লিখিত অনুমতি ছাড়াই কাজটি করছে সিটি কর্পোরেশন।
দুইটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানই দাবী করেছেন তারা লিখিতভাবে কোন অনুমতি দেননি। গত দুই দিন আগে আলিয়া মাদরাসার ছাত্ররা এখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে সিসিকের লেবারদের চলে আসতে হয় এখান থেকে। বর্তমানেও নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক ছাত্রদের মধ্যে। তারা মনে করছেন, সরকারের এত ভূমি থাকতে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ কতটুকু যুক্তি সংগত?
আব্দুল হাকিম নামে আলিয়া মাদরাসার এক ছাত্র জানান, সিটি কর্পোরেশন কি আর কোন জমি পায়নি, যে মাদ্রাসার জমিতে টয়লেট নির্মাণ করতে হবে।
সিভিল সার্জন অফিসের দিকে আরেকটু জমি নিলেই তো মাদরাসার জমি নিতে হতো না। এই প্রতিষ্ঠানটির সাথে অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িত রয়েছে। প্রক্ষান্তরে এখানে ধর্মীয় ও অনভূতিতে আঘাত হানার উদ্দ্যেশ্যেই এই তৎপরতা।
সিসিকের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, আমরা কারো জমি জোর করে নিতে পারিনা। জমি নিতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে নিতে হবে। কেউ যদি স্বেচ্ছায় জমি না দেয় তবে নেয়া যাবেনা।
সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ প্রফেসর আলী আহমদ খান বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে লিখিত কিছু পাইনি বা লিখিত অনুমতিও দেইনি। মেয়র মহোদয় আমাকে বলেছেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সাথে কথা বলে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, জমি দেয়ার এখতিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। সিটি কর্পোরেশন থেকে আমাকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। আমি চিঠি মন্ত্রণালে পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় কোন অনুমতি দেয়নি।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বিষয়টিতে জনস্বার্থ জড়িত। আমরা সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়েই প্রকল্পটি করছি। নগরীর বৃহত্তর স্বার্থেই এটি করা হচ্ছে।