বিসিএস নন–ক্যাডার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হতে অনীহা দেখাচ্ছেন প্রার্থীরা। তাঁদের দাবি, সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) নন–ক্যাডারে নবম ও দশম গ্রেড ছাড়া নিয়োগ দিতে পারে না। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ এখনো ১২তম গ্রেড।
অবশ্য পিএসসি বলছে, গ্রেডের সমস্যা সমাধান করবে মন্ত্রণালয়। সেটি তাদের বিষয় নয়।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ৩৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ৮৯৮ জনকে গত বছরের আগস্টে নন-ক্যাডার হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল পিএসসি। এই পদ ১২তম গ্রেড হওয়ায় অনেক প্রার্থী এই পদে যোগদানে অনীহা দেখান। গ্রেড জটিলতায় তাঁদের আপত্তির বিষয়টি মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গড়ায়। ওই সময় মন্ত্রণালয় পদটি দশম গ্রেডে উন্নীত করার চেষ্টা করে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। ওই অবস্থাতেই নিয়োগ দেওয়া হয় তাঁদের। এ জন্যই ওই পদের নিয়োগ দিতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পিএসপির সুপারিশ করা ৮৯৮ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জন প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করেছেন। চাকরিতে যোগ দেননি আরও প্রায় ৪০০ জন। এঁরা আর যোগদান করবেন না বলেই মনে করছে মন্ত্রণালয়।
এ অবস্থার মধ্যে ৩৬তম বিসিএসে ৩ হাজার ৩০৮ জনকে নন–ক্যাডার হিসেবে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্য থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সারা দেশে এখন ২০ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু পদে শিক্ষক নিয়োগ দিতে আমরা পিএসসিকে চিঠি দিয়ে শূন্য পদের সংখ্যা উল্লেখ করে নিয়োগ দিতে বলেছি।’ গ্রেড জটিলতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বেতন ও গ্রেড সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। হয়তো শিগগিরই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন আমার প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ দিতে শূন্য পদের তালিকা পেয়েছি। এখন নন ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেব। গ্রেড জটিলতার বিষয়ে চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা মন্ত্রণালয়ের সমস্যা। তারাই সেটি সমাধান করুক। আমরা নিয়োগ দেব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩৪তম নন–ক্যাডারে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া কয়েকজন প্রার্থী বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদটি ২০১৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু তখন মন্ত্রণালয় কৌশলে প্রধান শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ করে ১১তম (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) ও ১২তম গ্রেডে (প্রশিক্ষণবিহীন)। এখন বিসিএসে উত্তীর্ণদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম বাস্তবায়ন করতে চাইছে। অথচ নন-ক্যাডার পদে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন পদে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন বা পেতে যাচ্ছেন, তাঁরা সবাই দশম গ্রেডে যোগ দিয়েছেন বা দিচ্ছেন। একই বিসিএসে কিছুসংখ্যক এক ধরনের সুবিধা পাবেন আর আমরা বঞ্চিত থাকব, সেটা হবে কেন?’
৩৬তম বিসিএসে নন–ক্যাডারে থাকা একাধিক প্রার্থী বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের পদ ১২তম গ্রেডের চাকরি। পিএসসির নিয়ম অনুযায়ী নবম ও দশম গ্রেড ছাড়া সুপারিশ করতে পারে না। আমরা এত কষ্ট করে তীব্র প্রতিযোগিতার পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে যদি ১২তম গ্রেড এ নিয়োগের সুপারিশ পাই, তাহলে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।’ তাঁরা এ ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ আশা করেন।