বসনিয়ার সাবেক সার্ব বাহিনীর প্রধান রাতকো ম্লাদিচকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক ট্রাইব্যুনাল আজ বুধবার এ রায় ঘোষণা করে। রাতকো ম্লাদিচের বিরুদ্ধে আনা ১১টি অভিযোগের মধ্যে ১০টিতে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় ‘বসনিয়ার কসাই’খ্যাত রাতকো ম্লাদিচ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। বিচারকদের বিরুদ্ধে চেঁচামেচি করার কারণে তাঁকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এর আগে ম্লাদিচের আইনজীবী তাঁর মক্কেলের উচ্চ রক্তচাপের কারণে রায় ঘোষণা স্থগিত রাখার আবেদন করেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরা এ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। ম্লাদিচ তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
৭৪ বছর বয়সী ম্লাদিচের বিরুদ্ধে নব্বইয়ের দশকে বলকান যুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে বলকান যুদ্ধেই ঘটে সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। ১৯৯২-৯৫ সালে বসনিয়া যুদ্ধের সময় বহু লোককে হত্যার মূল হোতা বলা হয় ম্লাদিচকে। এর মধ্যে স্রেব্রেনিৎসায় আট হাজার পুরুষ ও বালককে হত্যা অন্যতম। ম্লাদিচের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়।
ম্লাদিচের যাবজ্জীবনের রায়ে বসনিয়ায় গণহত্যার শিকার অনেকের আত্মীয় ও পরিবার-পরিজন সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে কেউ কেউ বলেছেন, ম্লাদিচের আরও কঠোর সাজা হওয়া উচিত ছিল।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিভাগের প্রধান জাইদ রা’দ আল-হুসেইন বলেছেন, আন্তর্জাতিক বিচার কেমন হওয়া উচিত—তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ম্লাদিচের বিরুদ্ধে এ রায়। এ সময় ম্লাদিচকে ‘সাক্ষাৎ শয়তান’ বলে অভিহিত করেন তিনি। অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই রায়কে ‘ন্যায়বিচারের যুগান্তকারী মুহূর্ত’ বলে মন্তব্য করেছে।
১৯৯৫ সালে যুদ্ধাপরাধে অভিযোগ ওঠার পর থেকে পালিয়ে ছিলেন ম্লাদিচ। তবে ২০১১ সালের মে মাসে সার্বিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য হেগের আদালতে পাঠানো হয়।