এই ম্যাচের আগে বিশেষ সতর্কীকরণ দেওয়া উচিত ছিল ‘হার্টের রোগীরা সাবধান’! নিছক মজা করেই কথাটা বলছিলেন একজন। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম কখনো স্তব্ধ কখনো উল্লাসে নেচেছে।
প্রতিটি মুহূর্ত জুড়ে ছিল টান টান উত্তেজনা। ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে যাচ্ছিল ম্যাচের রং। বিজয়ের উন্মাতাল হাওয়া কখনো ঢাকার দিকে আবার কখনো রংপুরের দিকে বয়ে যাচ্ছিল। এমন রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের ফলাফলটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে শেষ ওভারের শেষ বলটি পর্যন্ত। স্নায়ু যুদ্ধের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ৩ রানের জয় হলো মাশরাফি বাহিনীর।
১৪২ রানের পুঁজি নিয়ে বোলিংয়ে নেমে ঢাকার দূর্গে প্রথম আঘাত হানেন রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি। ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ০ রানে মিথুনের গ্লাভসে ধরা পড়েন সুনিল নারাইন। ৩ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন অধিনায়ক সাকিব। ঢাকা অধিনায়ককে ১১ রানেই বোল্ড করে দেন সোহাগ গাজী।
২৫ বলে ২৮ রান করা ওপেনার এভিন লুইসও গাজীর দ্বিতীয় শিকার হন। এমন সময় আবারও আঘাত হানেন মাশরাফি। জহরুল ইসলামকে (২৯) সরাসরি বোল্ড করে দেন তিনি। মোসাদ্দেক রান-আউট হলে ৭৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে ঢাকা ডায়নামাইটস।
সেই মুহূর্তে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন শহীদ আফ্রিদি আর মেহেদী মারুফ। ১৫ বলে ১ চার ২ ছক্কায় ২১ রান করা আফ্রিদিকে বোল্ড করে প্রতিরোধ ভাঙেন রুবেল। একপ্রান্ত আগলে ছিলেন মেহেদী মারুফ। পোলার্ডের সঙ্গে জুটি বেঁধে এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। তবে ব্যক্তিগত ১৫ রানে রুবেল হোসেনের বলে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে ফিরতে হয় তাকে। ম্যাচ চলে আসে টান টান উত্তেজনা। মালিঙ্গার করা ১৯ তম ওভারের শেষ বলে ক্যাচ দেন নাদিফ চৌধুরী (২)।
শেষ ওভারে দরকার হয় ১০ রানের। বল হাতে গুরুদায়িত্ব পালন করত আসেন থিসারা পেরেরা। প্রথম দুই বল ডট। তৃতীয় বলে ছক্কা। দরকার আরও ৪ রান। চতুর্থ বলে রান নিলেন না পোলার্ড। পঞ্চম বলে তার স্টাম্প উড়িয়ে দিলেন পেরেরা। শেষ বলে উড়ে গেল আবু হায়দার রনির স্টাম্প। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা শেষে জয়ের উন্মাতাল আনন্দে মাতল রংপুর রাইডার্স।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে ১৯.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান তোলে রংপুর রাইডার্স। যথারীতি ক্রিস গেইল আর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। ম্যাককালাম অবশ্য আজ ৬ রান করেই আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে যান। তবে স্বরূপে দেখা দেন ক্রিস গেইল। উইকেটের চারপাশে শুরু হয় চার-ছক্কার বন্যা। আফ্রিদিকে ছক্কা মেরে ২৭ বলে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। তাকে থামানোর জন্য তরুণ অল-রাউন্ডার মোসাদ্দেককে বোলিংয়ে আনেন সাকিব। তার বলেই ক্যাচ দেন ৫ বাউন্ডারি এবং ৪ ওভার বাউন্ডারিতে ৫১ রান করা গেইল।
শাহরিয়ার নাফীস যথারীতি ইনিংস বড় করতে পারেননি। সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে মোহাম্মদ আমিরের তালুবন্দি হওয়ার আগে করেছেন ৯ রান। রানের গতি বাড়াতে ৫ নম্বরে নেমে ১ চার ১ ছক্কায় ১৫ রান করে আফ্রিদির দ্বিতীয় শিকার হন অধিনায়ক মাশরাফি। মিথুনকে (২২) প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে দ্বিতীয় শিকার ধরেন সাকিব। আমিরের বলে থিসারা পেরেরা (১৫) ফেরার পর স্বরূপে দেখা দেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার।
ইনিংসের ২০ তম ওভার করতে এসে একে একে তুলে নেন ৩ উইকেট। এছাড়া ছিল একটি রান-আউট। প্রথম বলেই সাকিব-সৈকতের যৌথ প্রচেষ্টায় রানআউট হয়ে যান রবি বোপারা (১২)। পরের বলেই পোলার্ডের তালুবন্দী হন জিয়াউর রহমান (৪)। এক বল পরে বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডারের চতুর্থ শিকার হন সোহাগ গাজী (০)। ওভারের পঞ্চম বলে রুবেল হোসেন (০) স্টাম্পড হয়ে গেলে সাকিবের ঝুলিতে ওঠে ৫ উইকেট। ১৪২ রানে অল-আউট হয় রংপুর রাইডার্স।