এম এ কাহার বকুল: লালমনিরহাট প্রতিনিধি;
লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরগামী পুরো মহাসড়কের দুই পাশে উন্মুক্ত স্থানে অসংখ্য পাথর ক্রাশ মেশিন বসানো হয়েছে।ফলে প্রচুর ধুলোবালির জন্য সানগ্লাস আর মাস্ক ছাড়া রাস্তায় চলাচল করাও দুস্কর হয়ে পড়েছে।
ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদেশী নাগরিকরা এ স্থলবন্দর দিয়ে ঢুকেই দেশের পরিবেশ আইনের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা নিয়ে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দরগামী পুরো মহাসড়কের দুই পাশে উন্মুক্ত স্থানে অসংখ্য পাথর ক্রাশ মেশিন বসানো হয়েছে।এ মেশিন সারা দিন চলে আর এই মেশিন থেকে বের হচ্ছে অসখ্য ধূলাবালি। আর এই ধুলোর কারণে হেটে পথ চলা তো দূরের কথা ঐ রাস্তা দিয়ে পথ চলা দুস্কর হয়ে দ্বারায়।
পাথর ক্রাশ মেশিনে অনেক শ্রমিক কাজ করে।
পুরুষরা শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০ টাকা ও নারী শ্রমিকরা ১৮০ টাকা মজুরিতে সেগুলোতে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পাথর ভাঙার কাজ করছেন।ফলে তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন সিলোকোসিস রোগে। পাথরের সিলিকন তাদের শরীরে প্রবেশ করে লিভার ও ফুসফুসে জমাট বেঁধে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এভাবে সিলোকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর ভাঙায় নিয়োজিত নারী-পুরুষ শ্রমিকেরা। শ্বাসকষ্টজনিত সিলোকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, এমনকি মৃত্যুও হচ্ছে তাদের। গত এক দশকে প্রাণঘাতি ওই রোগে ৬৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হওয়া ছাড়াও রোগ যন্ত্রণায় ধুঁকছেন অনেকে।
২০০৭ সাল থেকে গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত সিলোকোসিস রোগে এ এলাকার ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমারা ঠাকুরপাড়া এলাকার শ্রমিক দুলাল হোসেন (৩৫) মারা যান। মৃত্যুর প্রহর গুণছেন রোগাক্রান্ত আরও অনেকেই।
ধুলোর কারণে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, ঐ এলাকায় কর্মরত সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পথচারীরা পড়ছেন বিপাকে। এরই মধ্যে এলাকা ছেড়েছেন অনেকেই।
বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার বলেন, সানগ্লাস-মাস্ক ছাড়া বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়াই শুধু নয়, ক্লাস করাও কষ্টকর। বাসায় ফিরেই পোশাক ধুতে হয়। তবুও সর্দি-কাশি লেগেই থাকে।
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ নিশাত বলেন, ধুলোবালি না উড়তে প্রতিটি পাথর ক্রাশ মেশিনে ও আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত পানি ঢালার নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকেই তা মানছেন না।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর কুতুবুল আলম বলেন, যেসব মেশিনে পানি না ছিটিয়ে পাথর ভাঙা হচ্ছে বা শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
জনবসতিহীন স্থানে এসব মেশিন সরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় জায়গা খোঁজা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ইউএনও এবং ইউপি চেয়ারম্যান।