কানাডায় ড.ইউনূস: বাংলাদেশ এগিয়ে নিচ্ছেন নারীরা

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ ঢাকা ফুলজান বিবির বাংলা বাংলার মুখোমুখি বাংলার সুখবর সারাদেশ সারাবিশ্ব

Dr_Younus

সাদিকা সুলতানা টরন্টো কানাড থেকে : আজকের বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের সাফল্যের পেছনে এক সময়ের অভাবগ্রস্থ দরিদ্র নারীরাই রয়েছেন। গত তিন দশকে গ্রামীণ বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পানে তারাই এগিয়ে নিতে পেরেছেন, অন্যের মাঝে কর্মসংস্থানের অনুপ্রেরণা সঞ্চার করতে পেরেছেন।

শুক্রবার কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঙ্ক স্কুল অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের ভিভিয়ান অ্যান্ড ডেভিড ক্যাম্বেল সম্মেলন কক্ষে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের কথোপকথনে এসব কথা বলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুই শতাধিক আমন্ত্রিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মূলধারার গণ্যমান্য অতিথিরা এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরো বলেন, সেই সকল নারীরা নিজেদের অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত বসবাস, সন্তান-সন্ততির শিক্ষায় অগ্রগতি, বিদ্যুতের অভাব পূরণে সৌরশক্তির ব্যবহার, দ্রুত যোগাযোগের অবলম্বন হিসেবে আধুনিক প্রযুক্তির মুঠোফোন, এমনকি ইন্টারনেটের ব্যবহারও তাদের করায়ত্ত্ব করেছেন। তারাই উদ্ভাবনী একাগ্রতায় এ সকল বিষয়বস্তুকে কাজে লাগাতে পেরেছেন।

এখন বাংলাদেশের প্রায় ৮৪ লাখ ঋণগ্রহীতা নারী গ্রামীণ ব্যাংকের ক্রমবর্ধমান উপায়ান্তর হিসেবে সামাজিক ব্যবসাকেও নিজেদের শিক্ষিত সন্তান-সন্ততির কর্মসংস্থানসহ অপরের কর্মের উৎস হিসেবে দেখছেন বলেও মন্তব্য করেন ইউনূস।

তিনি বলেন, একইভাবে সেই সামাজিক ব্যবসা মুনাফা নয়, বরং বর্তমান প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, মেধা ও দক্ষতাকে ব্যবসায়িক পরিপূরক এবং বাজার ব্যবস্থার নবতর উপায় হিসেবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বিশ্বের সর্বত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আগ্রহী হচ্ছে। প্রতিটি মহাদেশেই এই সামাজিক ব্যবসা কেবল ধারণা নয়, বরং সফল অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কেননা, তাতে মুনাফার চেয়ে মানবিকতা জাগরিত হচ্ছে এবং মানুষ তার সুপ্ত সৃজনশীলতাকে মেলে ধরতে সক্ষম হচ্ছেন।

স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত অনলাইন লাইভ ওয়েবকাস্টে এ কথোপকথন সারা পৃথিবীতে প্রদর্শিত হয়।

কানাডার মূল ধারার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক গ্লোব অ্যান্ড মেইলের সাবেক প্রধান সম্পাদক ও মাঙ্ক স্কুল অফ গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র ফেলো জন স্টেকহাউজ অনুষ্ঠানটিতে মডারেটর ছিলেন। তার আগে একই স্কুলের পরিচালিকা জেনিস গ্রোস স্টেইন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিচিতি তুলে ধরেন।

জেনিস গ্রোস স্টেইন বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের মাঝে আসায় আমরা গর্বিত। তিনি তার বাংলাদেশকে যেমন গর্বিত করেছেন, তেমনি তার ক্ষুদ্রঋণের ধারণা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছে এবং আমরা তাকে ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করায় তিনিও আমাদের একজন সন্মানিত গ্রাজুয়েট। এ সময় সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত অতিথিরা আনন্দে উদ্বেলিত হন।

মডারেটর জন স্টেকহাউজ কথোপকথনের শুরুতেই গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ‘তথাকথিত সৃষ্ট অস্বচ্ছতা’, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি কর্মের উপযোগ, সামাজিক সঞ্চালন পরিসীমা, সামাজিক ব্যবসার উপায়ান্তর ছাড়াও ১৯৯০ সালে স্বচক্ষে দেখা বাংলাদেশে গ্রামীণফোনের অগ্রযাত্রা বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে ধরেন। এছাড়াও উপস্থিত অতিথিসহ অনলাইনে তাৎক্ষণিকপ্রাপ্ত অপরাপর দর্শক-শ্রোতার কয়েকটি প্রশ্ন করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার অভিজ্ঞানটি তথ্য-উপাত্ত ও নানা দেশের নানা উদাহরণ সহকারে ব্যাখ্যা দেন। জানান, কীভাবে সামাজিক ব্যবসার অধীনে আলবেনিয়ার পাহাড়ি নারীরা মধু বাজারজাত করছেন আর ইউরোপিয়ান, কলাম্বিয়ান ও জাপানি ব্যবসায়ীরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

ড. ইউনূস বলেন, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কোনো অস্বচ্ছতা নেই, বরং ‘কেউ একজন’ সেটিকে উপহাস করেছেন। অবশ্য পৃথিবীতে ‘রং অ্যান্ড রাইট মাইক্রো-ক্রেডিট’ রয়েছে এবং তারই ভিত্তিতে ব্যর্থতা ও সফলতা নিরূপিত হচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণের সার্থকতার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপন্থা না থাকলেও তার সার্থকতা বা সফলতা উদ্ভাবিত মেধার ভিত্তিতেই ঘটছে।

এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সৃষ্ট জটিতা বিষয়ে ড. ইউনূস একটি প্রশ্নের উত্তর সরাসরি নাকচ করে দিলেও অপর এক প্রশ্নের জবাবে তার ১০ সপ্তাহের রাজনৈতিক স্পৃহাটি কোনো রাজনৈতিক দল গঠনে উদ্বুদ্ধ করেনি বলে উল্লেখ করেন। ফলে প্রশ্নোত্তর পর্বে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রদত্ত উত্তর ফলপ্রসূ ভাবনার উদ্রেক করায় মডারেটর জন স্টেকহাউজ ‘টেরিফিক’ অর্থাৎ ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্যটি করেন।

মাঙ্ক স্কুলের পরিচালিকা ও অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা জেনিস গ্রোস স্টেইন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ হাজার শিক্ষার্থীর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে বিগত বছরে ঐতিহাসিকভাবে প্রথম নির্বাচিত সহ সভাপতি বাংলাদেশি-কানাডিয়ান অনিক খানের ব্যক্ত করা ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইজ লাইক মাইক জ্যাগার টু আওয়ার জেনারেশন’ অর্থাৎ ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের প্রজন্মের কাছে মাইক জ্যাগার তুল্য কিংবদন্তী’ কথাটি জুড়ে দিয়ে তার সমাপনী বক্তব্য রাখেন। এতে আমন্ত্রিত অতিথিরা আরেকবার উচ্ছ্বসিত হয়।

এ ওয়েবকাস্ট অনুষ্ঠানে মাঙ্ক স্কুল অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স থেকে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মতিউল আলম, রথম্যান স্কুল অব বিজনেসের প্রভাষক জেফ রাইব্যাক, প্রাদেশিক লিবারেল পার্টির মাল্টিকালচারাল সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জিনা বেঞ্জিক, আমাদের সময় ডটকম ও দৈনিক আমাদের অর্থনীতির প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী বোখারী, কানাডার বহুল প্রচলিত সাপ্তাহিক বাংলা মেইল ও বেঙ্গলি টাইমসের সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টু প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *