*আট বছর নয় মাসে নিখোঁজ ৩৯৫ জন
*পরে লাশ পাওয়া যায় ৫২ জনের
*ফিরে আসে ১৯৫
*এখনো নিখোঁজ ১৪৮
কেউ বাসা থেকে বা অফিস থেকে বেরিয়েছিলেন। কেউ বাসাতেই স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিলেন। কখনো সাদাপোশাকে, কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁদের তুলে নিয়ে গেছে। পরে কারও কারও লাশ পাওয়া গেছে, কেউবা ফিরে এসেছেন। অনেকে এখনো নিখোঁজ রয়ে গেছেন।
‘নিখোঁজ’ এসব ব্যক্তির নাম অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস কমিশনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গুম হওয়া মানুষের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। এই তালিকায় সাবেক সাংসদ, রাজনীতিক নেতা ও কর্মীদের পাশাপাশি সম্প্রতি যুক্ত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুস্তক প্রকাশক, ব্যবসায়ী ও ব্যাংক কর্মকর্তা।
গত তিন মাসে ঢাকা থেকে নিখোঁজ ১২ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান, পুস্তক প্রকাশক তানভীর ইয়াসিন করিম, সাংবাদিক উৎপল দাস, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা শামীম আহমেদ, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায় অন্যতম। তাঁদের মধ্যে শামীম আহমেদ ও সর্বশেষ অনিরুদ্ধ রায় ফিরে এসেছেন। বিজেপির দুই নেতাকে পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
হংকংভিত্তিক এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি) ও দেশীয় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট বছর নয় মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৯৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তাঁদের মধ্য থেকে ৫২ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ফিরে এসেছেন ১৯৫ জন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১৪৮ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজের সংখ্যা আরও বেশি। এর মধ্যে অনেক ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জড়িত বলে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা বিভিন্ন সময় অভিযোগ তুলেছেন। এর মধ্যে টাকার জন্যও মানুষ গুম ও খুনের ঘটনা আছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা এর বড় উদাহরণ।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজার মতে, অব্যাহতভাবে ঘটে চলা গুমের ঘটনাগুলো বার্তা দিচ্ছে যে রাষ্ট্রে আইনের শাসন চলছে না। এখানে কারও জীবনের নিশ্চয়তা নেই। যে কেউ, যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো জায়গা থেকে গুম হয়ে যেতে পারেন।
সরকারের পক্ষ থেকে মানুষ গুম হওয়ার অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেছেন, গুম বলে কিছু নেই। অনেকে মামলার আসামি, গ্রেপ্তার এড়াতে নিজ থেকে আত্মগোপন করেন। পরিবার তা গুম বলে প্রচার করে। তবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওয়েবসাইটে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৫২ জন গুম হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিপা হাফিজা বলেন, ‘রক্ষাকর্তারা বলছেন মানুষ নিজে নিজে হারিয়ে যাচ্ছে। আমি সরকারকে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে বলব। সেই কমিশন গত এক বছরে যাঁরা রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁদের কতজন কেন, কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন তার তালিকা আমাদের দিক।’
গতকাল যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, স্বাধীন কমিশন গঠন করে গুমের ঘটনা খতিয়ে দেখার কোনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ তিনি পাননি। পেলে ভেবে দেখবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি কাউকে গ্রেপ্তার করে, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে আদালতে উপস্থাপন করে। তারপরও এ ধরনের অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে দেখা হয়।
বড় অংশ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী
গত আট বছরে গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একটা বড় অংশ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। এর মধ্যে কেবল ঢাকা থেকে গুম হয়েছেন বিএনপির এমন ২৫ জন নেতা-কর্মীর নাম এ বছরের ১১ জুলাই প্রকাশ করেছে দলটি। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের দাবি, তাদের ২৯ জন নেতা-কর্মী নিখোঁজ আছেন।
এর মধ্যে বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী ও সালাউদ্দিনের ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। তাঁদের আগে ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল রাজধানীর উত্তরা থেকে সাদাপোশাকে একদল লোক সিলেটের ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমেদ ও জুনেদ আহমেদকে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে মূলত দেশে গুমের নতুন একটি পর্বের শুরু হয় বলে দাবি করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এই দুজন গুম হওয়ার ঠিক দুই সপ্তাহ পর গুম হন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আলী। ইফতেখার আহমেদের (দিনার) বোন ও জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি তামান্না শামীম ১৩ নভেম্বর বলেন, ‘আমার মনে হয়, দিনার-জুনেদ ছিল গুম শুরুর মহড়ার অংশ। তারা দেখেছে প্রতিক্রিয়া কী হয়। সবাই ভয়ে চুপসে যাওয়ায় এরপর ইলিয়াস আলীকে গুম করার সাহস পায়।’
গত জাতীয় নির্বাচনের আগে, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বরের পর থেকে ২৪ দিনে গুম হয়েছিলেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৯ জন নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে ৫ জনকে পরে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। অন্যদের এখনো খোঁজ মেলেনি।
এর মধ্যে লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ সাইফুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবিরসহ ৩ জনকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে ধরে নেওয়া হয় ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর। তাঁদের মধ্যে সাইফুল ও হুমায়ুনকে আর পাওয়া যায়নি।
হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার বলেন, ওই অ্যাম্বুলেন্সে থাকা তৃতীয় ব্যক্তি হলেন লাকসাম পৌর বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জসিমউদ্দীন। হরতালের কারণে তাঁরা ৩ জন অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা আসছিলেন। কুমিল্লার হরিশচরে অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে র্যাব-১১ তুলে নিয়ে যায় ৩ জনকে। পরে জসিমউদ্দীনকে র্যাব লাকসাম থানায় হস্তান্তর করে। বাকি ২ জনকে আজও পাওয়া যায়নি।
হুমায়ুন কবির ও সাইফুল ইসলামের স্বজনদের ধারণা, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় যেসব র্যাব কর্মকর্তার সাজা হয়েছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই ২ জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা বেরিয়ে আসবে।
শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ফিরবে কি না, জানি না। আমার শ্বশুর মামলার বাদী ছিলেন, ন্যায়বিচার চাইতে চাইতে তিনি মারা গেছেন। এখন আমি মরার আগে অন্তত ন্যায়বিচার হয়েছে, এটা দেখে যেতে চাই।’
২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তেজগাঁও থানার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলামসহ ৬ জনকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। একই দিন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আরও ২ জনকে।
নির্বাচনের আগে-পরে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী গুমের ঘটনা ঘটলেও গত আট বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কমপক্ষে ৬ জন গুম হন। এ ছাড়া গুম হয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা মোহাম্মদ আলী মহব্বত। পরে মহব্বতের খোঁজ পাওয়া গেলেও শামীম আহমেদ এখনো নিখোঁজ।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) পরিচয়ে ২০১২ সালে আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমানকে তাঁর স্ত্রী ও মায়ের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন মাস চার দিন পরে তাঁকে ঢাকার নিউমার্কেট থানায় একটি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
২০১৪ সালে কুমিল্লার মুন্সেফ কোয়ার্টারের বাসা থেকে বাবা-মা-স্ত্রীর সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় যুবলীগ নেতা রকিবুল ইসলামকে। তাঁর বাবা আবদুল মতিন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেহরক্ষী ছিলেন। তিনি বলেন, রকিবুলের মা ছেলের শোকে এখন প্রায় মানসিক ভারসাম্যহীন।
২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মোয়াজ্জেম হোসেনকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয় দিয়ে একদল লোক। এখনো তাঁর সন্ধান পায়নি পরিবার।
‘নিখোঁজ’ জনপ্রতিনিধি
২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৬ জন জনপ্রতিনিধি ‘নিখোঁজ’ হন। এই তালিকার শুরুতেই আছেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম। তিনি ২০১০ সালের ২৫ জুন নিখোঁজ হন। এরপর যে ৪ জন জনপ্রতিনিধি নিখোঁজ হন, তাঁদের ৩ জন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা হলেন বেনাপোল পৌরসভার প্যানেল মেয়র তরিকুল আলম (২০১৩ নিখোঁজ) এবং সিদ্ধিরগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম (২০১৪)। এ বছরের সেপ্টেম্বরে জামালপুরের সরিষাবাড়ী থেকে নিখোঁজ মেয়র রুকনুজ্জামান রুকন ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন। দুদিন পর শ্রীমঙ্গল থেকে উদ্ধার হন তিনি।
আরও যাঁরা গুমের শিকার
চাঞ্চল্যকর খুনের তদন্ত চলাকালীন কমপক্ষে ৪ জন নিখোঁজ ছিলেন। ২০১১ সালে আহসান উল্লাহ মাস্টার খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ জামাল আহমেদ নিখোঁজ হন। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি খুনের ঘটনায় স্কলাসটিকা স্কুলের শিক্ষক তানভীর রহমান ২০১২ সালের ১ অক্টোবর নিখোঁজ হন। আট দিন পর জানানো হয় তানভীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান (তনু) খুন হওয়ার সাত দিন পর বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মিজানুর রহমান নামের এক তরুণকে। ওই তরুণ ছিলেন তনুর ভাই আনোয়ার হোসেনের বন্ধু। দুই সপ্তাহ পর চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম খুনের ঘটনার প্রধান আসামি কামরুল শিকদার (মুসা) নিখোঁজ আছেন। তাঁর স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, মুসাকে গুম করা হয়েছে।
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০৯-১৭ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গুম হয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও জঙ্গিবাদে সংশ্লিতার অভিযোগ আছেন এমন ব্যক্তিরা। তার বাইরে রাজনৈতিক নেতাদের গাড়িচালক, শ্রমিকনেতা থেকে শুরু করে পোশাকশিল্প কারখানাসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক, ব্যাংক কর্মকর্তা, চিকিৎসক, আইনজীবী, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, এনজিও কর্মকর্তাও রয়েছেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, গুমকে একধরনের দায়মুক্তি দিয়ে দেওয়াটা রাষ্ট্রের জন্য অভিশাপ হয়েছে। রাষ্ট্র যখন তার নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তখন তার প্রতি নাগরিকের একটা অনাস্থা তৈরি হয়, সে রাষ্ট্রের প্রতি তার বিদ্বেষ বাড়ে। এর ফল ভয়াবহ হতে পারে।
অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩৯৫ জন গুমের ঘটনার মধ্যে ১৪৮টিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে র্যাবের বিরুদ্ধে। পুলিশের ৪৬ জনকে, র্যাব ও ডিবি যৌথভাবে ১১ জনকে, ডিবি ১০৬ জনকে, শিল্প পুলিশ ও আনসার ১ জন করে এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ৮২ জনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে।
জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘র্যাবের বিরুদ্ধে তো কোনো অভিযোগ নেই। বলা হচ্ছে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই আমরা ভুয়া ডিবি, ভুয়া র্যাব পাচ্ছি। আর আমাদের কোন গাড়ি কোথায় টহল দিচ্ছে সেটা সদর দপ্তর থেকে নজরদারি করা হয়। কাজেই র্যাবের এসবে জড়ানোর কোনো সুযোগই নেই।’
তবে মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ উঠেছে। সেগুলোর কোনো তদন্ত হয়েছে কি না, সে খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলেছে, ২০১২ সাল থেকে ৩৫টি ঘটনায় কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে ২২টি ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠির কোনো প্রাপ্তি স্বীকারও করেনি। ১৩টি চিঠির উত্তর দিলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে বলেনি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেসব দেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় গুমের ঘটনা ঘটছে, সেসব দেশে আদালত সব সময় ভুক্তভোগীদের পক্ষে সুবিচার করতে পারেন না। এতে করে দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে যায়। দেশগুলোয় অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।