বিপথগামী তরুণদের সুপথে আনার আইসল্যান্ডিয় তরিকা

Slider সারাবিশ্ব

150357youth-iceland

 

 

 

 

ইউরোপের দেশ আইসল্যান্ডে ৮০ ও ৯০ দশকে জন্মগ্রহণকারী তরুণদের নিয়ন্ত্রণ করা ক্রমে কঠিন হয়ে উঠছিল। তাদের মধ্যে ক্রমে মদ্যপান ও ড্রাগ আসক্তির সংখ্যা বাড়ছিল।

ফলে বিষয়টি আর কোনো ক্রমেই হেলাফেলার উপায় ছিল না।

বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকরাও আইসল্যান্ডের অল্পবয়সীদের এ বিপথগামীতা থেকে ফেরানোর উপায় নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। এরপর অভিনব এ উদ্যোগটি নেয়া হয়। এর ফলে কমে আসে তরুণদের বিপথগামীতা।

১৯৯৮ সালে যেখানে দেশটির ৪২ শতাংশ ১৫ বছর বয়সীরা জানিয়েছিল তারা মদ্যপান করে, তা এখন কমে মাত্র ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

পরিসংখ্যানে প্রকাশ, মাত্র ২০ বছর আগেও যেখানে দেশটির রাজধানী তরুণদের মদ্যপান, ধূমপান ও ড্রাগ ব্যবহারের দিক দিয়ে ইউরোপের সবচেয়ে বাজে দেশ ছিল। এখন তা ইউরোপের সবচেয়ে ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে।

কীভাবে সম্ভব হলো তরুণদের মাঝে এ যুগান্তকারী পরিবর্তন করা? এ বিষয়ে দেশটির পাঁচটি নিয়ম কঠোরভাবে পালন করাকেই এ সফলতার উৎস হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আইসল্যান্ডের সফলতার পেছনের নিয়মগুলো হলো-

১. দেশটির ১৬ বছর বয়সের নিচের সবাইকে রাত ১০টার মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে বাসায় ফিরতে হয়।

রাত ১০টা বাজলেই রাস্তাঘাটে তল্লাশি চালানো হয়, যেন কোনো অল্পবয়সী বাড়ির বাইরে না থাকতে পারে।

২. অভিভাবকরা নিজেদের মধ্যেই একটি অঙ্গীকার করেন যে, তারা নিজেদের মাঝে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলবেন। এসব নিয়মের মধ্যে থাকতে পারে তারা তাদের শিশুদের অ্যালকোহল থেকে দূরে রাখবেন এবং পরিবারের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটাবেন।

৩. সন্তানদের ব্যস্ত রাখার জন্য বেশ কয়েকটি কাজ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্কুলের পরেও যেন তারা খেলাধুলা, ঘোড়ায় চড়া ও অন্যান্য বিনোদনমূলক কাজে যুক্ত থাকতে পারে, তা নিশ্চিত করা। এজন্য তাদের প্রত্যেককে ৫০০ ডলারের একটি ভাউচারও দেওয়া হয়।

৪. তরুণদের চাহিদা নিরুপণ করার জন্য প্রতি বছর একটি জরিপ পরিচালিত হয়। এতে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদের জীবনের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, তাদের বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক ও অনুভূতি সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া হয় জরিপে। রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রত্যেক এলাকার জন্য ভিন্ন ভিন্ন করণীয় ঠিক করা হয়।

৫. দেশটির রাজনীতিবিদরাও তরুণদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন। রাজনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া তরুণদের সুপথে আনার বিষয়টি কঠিন ছিল। আর সেই ঘাটতিও পূরণ করেছে দেশটির রাজনীতিবিদরা। এ বিষয়ে আইসল্যান্ডের রাজধানী রিকজাভিকের মেয়র ডেগুর ইগার্টসন বলেন, বাস্তব পরিস্থিতি ও গবেষণার ভিত্তিতে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে, আমরা কি করতে চাই। এজন্য অর্থ বরাদ্দ করতে হবে এবং সেখানে গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে, স্কুলে ও ক্লাবে গিয়ে তরুণদের সঙ্গে কথা বলতে হয়।

এ পাঁচ পদক্ষেপেই সুফল মিলেছে আইসল্যান্ডে। তরুণেরা ফিরে এসেছে সুপথে। তাদের মধ্যে আর মদ্যপান, ধূমপান ও ড্রাগ নেওয়ার মতো অপরাধ দেখা যায়না বললেই চলে। আইসল্যান্ডের এ উদ্যোগ এখন বিশ্বের সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে। ইউরোপের ৩৫টি শহরে আইসল্যান্ডের এ উদ্যোগ এখন অনুসরণ করা হচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *