ছাত্রী অপহরণে দুজন রিমান্ডে

Slider বাংলার আদালত

b3090de3b50a9c9b4f63413475fac9c0-5a116227b7419

 

 

 

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ওই ছাত্রীর সাবেক স্বামী সোহেল রানা ও মাইক্রোবাসচালক জাহিদুল ইসলামের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অপর আসামি সোহেল রানার বাবা জয়নাল আবেদীনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে আদালতে হাজির করে পুলিশ ওই তিনজনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আবেদন করে। পরে বিকেলে রাজশাহী মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত-১-এর বিচারক মাহবুবুর রহমান ওই দুজনকে একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

একই সঙ্গে রাজশাহী মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত-৩-এর বিচারক জাহিদুল ইসলাম অপহৃত ছাত্রীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা ফাঁড়ির পরিদর্শক ইসমাইল হোসেন বলেন, ওই ছাত্রী এজাহারের সপক্ষে জবানবন্দি দিয়েছেন। ক্যাম্পাস থেকে তাঁকে জোর করে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে ওই ছাত্রীকে তাঁর বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়।

এদিকে অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী মহানগর পুলিশ। সেখানে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে ঢাকায় মাইক্রোবাসচালক মো. জাহিদুলকে আটক করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার বেলা দুইটার দিকে ঢাকার রায়েরবাগ এলাকার একটি কাজি অফিসে যাওয়ার সময় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় আটক করা হয় অপহরণকারী সোহেলকে।

মাহাবুবর রহমান আরও বলেন, এক বছর আগে সোহেল ও ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়। কিছুদিন আগে স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান ওই ছাত্রী। বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার আগেই তা ঠেকাতে ওই ছাত্রীকে শুক্রবার ক্যাম্পাস থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যান সোহেল রানা। বিবাহবিচ্ছেদ প্রত্যাহার করানোর জন্য মেয়েটিকে ঢাকায় কাজি অফিসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে মাহাবুবর রহমান বলেন, উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য নগর পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সহায়তায় মতিহার থানা-পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনার পর দ্রুত ছাত্রীকে উদ্ধার করা গেছে, এটা স্বস্তির। তবে নিরাপত্তাব্যবস্থা অপ্রতুল ছিল আমি স্বীকার করি। আমরা কর্তৃপক্ষকে বলব, আরও বেশি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’

সংবাদ সম্মেলন শেষে ওই ছাত্রীর বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেয়েকে ফিরে পাওয়ায় আমি পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। সোহেল রানা বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছিল। আর কোনো মেয়েকে যেন এ ধরনের নির্যাতনে শিকার না হতে হয়।’ মেয়ে স্বেচ্ছায় গিয়েছিল কি না—এমন গুজবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা আমার মেয়ের ক্ষতি করার জন্য আগে থেকেই হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। এর সূত্র ধরেই মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।’ মেয়ের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘মাইক্রোবাসে তোলার সময় চিৎকার করে আমার মেয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু মাইক্রোবাস বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পার হয়ে যাওয়ার পর হুমকির মুখে ওই ছেলের কথামতো চুপচাপ ছিল। না হলে তারা আরও ক্ষতি করত।’

গত শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রী বিভাগের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য তাপসী রাবেয়া হল থেকে বের হন। তিনি ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে পৌঁছালে সেখান থেকে তাঁকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান সোহেল ও তাঁর সহযোগীরা। ওই দিন সন্ধ্যায় মতিহার থানায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে অপহরণ মামলা করেন। মামলায় স্বামী সোহেল রানাসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। পরে রাতে ওই ছাত্রীর শ্বশুর জয়নাল আবেদীনকে নওগাঁর পত্নীতলা থেকে আটক করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *