বিএনপির মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়নি, আ.লীগে ঐক্য!

Slider রংপুর

9824918f36162f80b4e259be84896ba4-5a11231b3445b

 রংপুর:  সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মনোনয়ন চূড়ান্ত করলেও বিএনপি এখনো প্রার্থী ঠিক করেনি। খুব শিগগিরই প্রার্থী চূড়ান্ত হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

অপরদিকে দলে বিভেদ কাটাতে বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সরফুদ্দীন আহমেদ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এতে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের প্রশমন হয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো বলছে।

জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তাফিজার রহমান। তবে গতকাল দলের পক্ষে এক বিজ্ঞপ্তিতে আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ারকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, তিনি যদি পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হন বা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করেন, তাহলে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তাঁকে পার্টির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
৫ নভেম্বর সিটি নির্বাচনে নিবাচনী তফসিল ঘোষণার পর ওই দিন থেকেই মনোনয়নপত্র দেওয়া শুরু হয়। আর নির্বাচন ২১ ডিসেম্বর।

দলীয় মনোনয়ন না পেলেও বিএনপির পক্ষে গতবার নির্বাচন করা মহানগরের সহসভাপতি কাওসার জামান এবারও মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। মাঠেও ব্যস্ত গণসংযোগে। গতকাল বিকেলে তিনি ১ নম্বর ওয়ার্ডের মনোহর চওড়াপাড়া এলাকায় ভোটারদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বিলম্ব ইচ্ছাকৃত নয়। এখানে বিএনপির শক্ত অবস্থানও রয়েছে। মনোনয়নের বিষয়ে আমরা তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা করে একটি তালিকা করেছি। নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তও হয়েছে। তবে মূল বিষয় হলো, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে এখনো আমাদের সংশয় রয়েছে। কারণ, এখনো আমাদের পথে নামতেই দেওয়া হচ্ছে না। মাঠে নামতে না পারলে, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু না হলে অংশগ্রহণ করে কোনো লাভ নেই। এসব বিষয় আমরা কেন্দ্রকে জানিয়েছি। এখন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’
আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বহুদিন থেকেই রংপুরে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে পারছি না। এমনকি মামলা-হামলার কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীদের চলাফেরা করাও কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে আমাদের আগ্রহ রয়েছে।’

এই তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কাওসার জামান ছাড়া অন্যরা মনোনয়নপত্র নেননি। তাঁরা হলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম ও জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম। এ ছাড়া বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করা বিএনপির মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ-উন-নবীও তাঁর নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন।
আ.লীগে মতবিরোধ কমানোর উদ্যোগ: বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সরফুদ্দীন আহমেদ গত দুদিন দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করছেন। বিধিমালা অনুসারে এখন এমন ঘরোয়া মতবিনিময় সভা করতে নিষেধ নেই। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার মহানগরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসেছিলেন। গতকাল সকালে আলোচনা করেছেন জেলার নেতা-কর্মীদের নিয়ে। দলের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন, নেত্রীর সম্মান রক্ষার জন্য সবাই মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল থেকেই দলের নেতা-কর্মীরা ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছেন। আজ রোববার থেকে তিনি জনসংযোগে নামবেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দলের ভেতরেও প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে মহানগর ও জেলা পর্যায়ের ১৭ জন ছিলেন মনোনয়নপ্রত্যাশী।
এঁদের একজন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার চিন্তা কারও নেই। দলের পক্ষ থেকে যতটুকু সহায়তা করা প্রয়োজন, তা করা হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান মনে করেন, নবীন নেতৃত্ব এলে ভালো হতো। তবে নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে মোকাবিলা করার মতো এই মুহূর্তে তিনি ছাড়া অন্য কোনো শক্তিশালী প্রার্থীও নেই।

বেকায়দায় জাতীয় পার্টি: জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। গতবার তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে মেয়র পদে লড়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। গতকাল বিকেল থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, পিরজাবাদ, নিসেবেতগঞ্জ এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাঙ্গল’ পাওয়ায় যেখানেই যাচ্ছেন সবাই আনন্দের সঙ্গে তাঁকে গ্রহণ করছে।

গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের পক্ষে তাঁর রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভ রায়ের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রংপুর সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজার রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরেক প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ারকে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, তিনি যদি পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হন, বা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করেন, তাহলে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তাঁকে পার্টির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
আসিফ শাহরিয়ার এইচ এম এরশাদের মেজ ভাইয়ের ছেলে। তিনি দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *