এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ মকবুল হোসেন, বয়স ১৬। বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের টেংরিয়া ঝাড়বাড়ী গ্রামে। বাবা আমিরুল ইসলাম পেশায় একজন পান দোকানদার। আমিরুলের চার সন্তান। দুই ছেলে মুন্না বাবুল ও মকবুল হোসেন, দুই মেয়ে শারমিন আক্তার ও আরজিনা পারভিন। সন্তানদের মধ্যে মকবুল হোসেন পরিবারে সবার ছোট।
৮ বছর আগে গ্রামে ভুট্টা বোঝাই একটি গরুর গাড়ির উপরে বসে বাড়িতে ফিরছিল কিশোর মকবুল হোসেন। পথে গাড়ির উপর থেকে পরে যায় সে এবং গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মকবুলের ডান পা ভেঙে যায়। এরপর স্থানীয়রা মকবুলকে উদ্ধার করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। পরে মকবুলকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক কামরুল হাসানের কাছে নেয়া হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মকবুলের পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়। তারপর চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে কিশোর মকবুল হোসেনের ডান পা কেটে ফেলা হয় এবং সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায় মকবুল।
ছোট ছেলে মকবুল হোসেনের চিকিৎসা করতে গিয়ে বাবা আমিরুল ইসলাম জায়গা-জমি, গরু-ছাগলসহ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে যায় পরিবারটি।
পঙ্গুত্ব থামাতে পারেনি কিশোর মকবুল হোসেনকে। পঙ্গু অবস্থায় লেখাপড়া স্বচল রেখেছিল মকবুল। শুধু লেখাপড়াই নয়- পরিবারের কাজকর্ম, খেলাধুলাসহ সব কাজেই অংশ নিয়ে কষ্ট করে দিন পার করেছিল মকবুল। বর্তমানে কিশোর মকবুল হরিপুর উপজেলার আর.এ কাঠালডাঙ্গী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছেন।
গত মার্চ মাসে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ডাকসু নেতা অ্যাডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু হরিপুর উপজেলার আমগাঁও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ঐ অনুষ্ঠানে কিশোর মকবুল হোসেনের সাথে সাক্ষাত হয় এই আওয়ামী লীগ নেতার।
এরপর তিনি মকবুলের পরিচয় নেয় এবং তাঁর পরিবারের সাথে যোগযোগ করেন। মকবুলকে সুস্থ্য জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু।
এরপর অ্যাডভোকেট টুলু ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিশোর মকবুলের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চলতি বছরের গত আগস্ট মাসে ঢাকার সাভারে অবস্থিত দেশের বিখ্যাত চিকিৎসা কেন্দ্র সেন্টার ফর দ্যা রিহ্যাবিলেটেশন অফ দ্যা প্যারালাইসড (সি.আর.পি) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দীর্ঘ ৭২ দিন চিকিৎসা ও প্রশিণ শেষে মকবুলের শরীরে উন্নতমানের কৃত্রিম ডা পা স্থাপন করা হয়। এরপর ঐ হাসপাতাল থেকে গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) মকবুল হোসেনকে রিলিস দেয়া হয় এবং গত মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) মকবুল হোসেন স্বাভাবিক স্বাভাবিক জীবনে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।
কিশোর মকবুল হোসেন বলেন, ভেবেছিলাম আমি হয়ত আর কখনো হাটতে পারব না। আর কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারব না। কিন্তু সেই ভাবনাকে দুরে ঠেলে দিয়েছে আ.লীগ নেতা টুলু। টুলুর সহযোগিতায় আজ আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি, হাটতে পারছি।
বাবা আমিরুল ইসলাম বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করে দিয়েছিলাম। টাকার অভাবে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ছেলের পা কেটে ফেলা হয়েছিল। সবাই বলেছিল, আমার ছেলে আর কোনদিনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট টুলুর সহযোগিতায় আমার ছেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। তাঁর এই ঋণ কোনদিনও শোধ করতে পারব না। শুধু মন থেকে চাই উনি যে সবসময় ভালো থাকেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু বলেন, কিশোর মকবুল হোসেন একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সে প্রতিবন্ধী অবস্থাকে মোকাবেলা করে তাঁর লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল এভং তাকে প্রাণচ্ছল ও বুদ্ধিমান মনে হয়েছিল। মকবুল হোসেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এজন্য তাকে সহযোগিতা করেছিলাম। মকবুল হোসেনের লেখাপড়া স্বচল রাখার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
বুধবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু, হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোজাফ্ফর আহমেদ মানিক, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম পুষ্প, ভাতুরিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মেহেদী হাসান লাবু, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কিশোর মকবুল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর খোজখবর নেন।