বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শক্তি আর অফুরন্ত প্রেরণার উৎস

Slider জাতীয়

022903kalerkantho-15-11-2017-59

 

 

 

 

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের সঙ্গে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জড়িত। এটি শুধু একটি ভাষণই ছিল না, বাঙালি জাতিসহ সারা বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে এই ভাষণ আজও যে শক্তি, অবলম্বন ও অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতির মাধ্যমে আবারও তা প্রমাণ হয়েছে।

তিনি বলেন ‘৭৫-পরবর্তী পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল, ৭ই মার্চের ভাষণকে নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। ইতিহাস সত্যকে তুলে ধরবে, ইতিহাস সত্যকে তুলে ধরে—ইউনেসকোর এই স্বীকৃতির মাধ্যমে সেটাই আজ প্রমাণ হয়েছে। ’

গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ বিধিতে আনীত একটি ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে  বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেসকোর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ইউনেসকোসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জাতীয় সংসদের তরফে ধন্যবাদ জানানো হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ধন্যবাদ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। দীর্ঘ আলোচনার পর সরকার ও বিরোধী দলের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

সরকার ও বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ ও রাজনীতির মহাকাব্য’ উল্লেখ করার পাশাপাশি দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণারও দাবি জানিয়েছেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদসহ সরকার ও বিরোধী দলের ৫৭ জন সংসদ সদস্য বক্তব্য দেন।

বিকেল পৌনে ৫টা থেকে আলোচনা শুরু হয়ে মাঝে ২০ মিনিটের বিরতি শেষে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত চলে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবটি সমর্থন করে বলেন, ‘ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের সঙ্গে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জড়িত। এই ভাষণের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত হয়েছিল। বাঙালি জাতির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মার যে গভীর একাত্মতা ছিল এই ভাষণে মর্মে মর্মে সেটি ফুটে উঠেছে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসকরাও কিন্তু বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বন্ধ করতে পারেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বাজানো বন্ধ করে দিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা এসে দেশ চালাচ্ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি। ’

সংসদ নেতা বলেন, পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যে সে দেশে একটি ভাষণ ৪৬ বছর ধরেই মানুষ শুনে যাচ্ছে, যা এখনো এতটুকু পুরনো হয়নি, আবেদন হারায়নি। বরং মানুষ এই ভাষণ শুনে নতুন করে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণের আগে বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেসা মুজিবের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণ দেওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুকে অনেক নেতা অনেক কথা বলেছেন। অনেকে অনেক কিছু লিখেও দিয়েছেন। জনসভায় যাওয়ার আগে আমার মা (বেগম মুজিব) বাবাকে (বঙ্গবন্ধু) ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, কিছু সময় রেস্ট নাও, তোমার সামনে অনেক দায়িত্ব। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি শুধু ভাষণ ছিল না, সারা বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের শক্তি জোগায়। আজ তার প্রমাণ হয়েছে। ভাষণটি আজ ১২ ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতি বাঙালি জাতির গর্ব, সারা বিশ্বে আজ সমাদৃত। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলব। বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। ’

সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সংসদের অভিমত এই যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেসকো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দেশ ও জাতির সঙ্গে আমরা গর্বিত এবং এ জন্য ইউনেসকোসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জাতীয় সংসদ ধন্যবাদ জানাচ্ছে। ’

প্রস্তাবটি উত্থাপন করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ, আজ তা প্রমাণিত। ইউনেসকোর এ স্বীকৃতি ছিল অত্যন্ত প্রত্যাশিত। বঙ্গবন্ধুর অলিখিত ১৮ মিনিটের এ ভাষণ বাঙালি জাতিকে জাতীয় মুক্তির মোহনায় দাঁড় করিয়েছিল। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা।

প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম, হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, অধ্যাপক আলী আশরাফ, এ বি তাজুল ইসলাম, মো. তাজুল ইসলাম, কাজী নাবিল আহমেদ, মোসলেম উদ্দীন, জাতীয় পার্টির জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *