গাজীপুর: গাজীপুরে কলেজছাত্র সারোয়ার হোসেনের (১৯) ডান হাতের কবজি কেটে দিয়েছে উঠতি সন্ত্রাসীরা। ঘটনার ১১ দিন পরও সাত আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি জয়দেবপুর থানা পুলিশ।
এঘটনায় মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে ব্যানার হাতে সন্ত্রাসীদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গত ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় মহানগরীর লাগালিয়া এলাকায় এ নৃশংস ঘটনা ঘটে। পরে সারোয়ারের বাবা আলমগীর হোসেন ঘটনার পরদিন আট জনের নামে মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন হাড়িনাল দক্ষিণ পাড়ার বশির উদ্দিনের ছেলে টুটুল (২০), আলী হোসেনের ছেলে অমিত (২১), লাগালিয়া পূর্বপাড়ার আজিজুল হকের ছেলে সোহাগ (২১), মোজাম্মেল হকের ছেলে আকাশ (২০), মঞ্জুর হোসেন দর্জির ছেলে নাজমুল (২০), লাগালিয়া মধ্যপাড়ার শাহীন মিয়ার ছেলে মবিন (২০), মো. শহীদুল্লাহর ছেলে সজীব (২০) ও বরুদার ঢাল এলাকার মফিজুল (২২)।
এর মধ্যে ঘটনার দিন রাতে মবিনকে গ্রেফতার করে এক দিনের রিমা-ে নিলেও বাকি সাত আসামিকে ১১ দিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাগালিয়া দক্ষিণ পাড়ার আলমগীর হোসেনের ছেলে সারোয়ার হোসেন গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে আসামিদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হয়। পরে শহরের জোড়পুকুর সড়কে অবস্থিত আপছন বিউটি পার্লারের মালিকের ছেলে লিকন সরকার সারোয়ারের সন্ধান দিলে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
এরপর গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে সারোয়ারকে হাড়িনাল বাজার থেকে তুলে নিয়ে প্রথমবার মারধর করা হয়। পরে গত ৩ নভেম্বর বিকেলে মুড়ি খাওয়ার কথা বলে মবিন ৫০০ টাকার বিনিময়ে সারোয়ারকে বাড়ি থেকে ডেকে বুলুর নামা নামক স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে ওঁত পেতে থাকা আসামিরা প্রথমে পিঠে কোপ দেয়। তখন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ইয়াবা ব্যবসায়ী টুটুল সামুরাই দিয়ে সারোয়ারের ডান হাতের কবজি কেটে ছুড়ে ফেলে দেয়। এসময় উল্লাস করে টুটুল বাহিনী।
পরে সারোয়ারকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে ঢাকার শের-ই-বাংলা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়েও চার ঘণ্টা পর খুঁজে পাওয়া হাতটি আর জোড়া লাগানো যায়নি। পরদিন পঙ্গু হাসপাতাল থেকে গাজীপুর নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তার বিচ্ছিন্ন হাতটি সারোয়ারের এক বন্ধুর ফ্রিজে রয়েছে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলের বেডে শুয়ে সারোয়ার বলেন, আমি এসএসসিতে এ প্লাস পেয়েছি। আমার হাতের লেখা সুন্দর থাকায় সবাই খুব প্রশংসা করতো। এখন আমার হাতটাই নেই। আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার বা পাইলট হওয়া। তারা আমার সব শেষ করে দিলো।
তিনি বলেন, খেলায় আমাদের দেয়া দুটি গোল তারা মানতে পারেনি। হাত কাটার পর আমার গলা কাটার কথাও বলছিল।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।